শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০১৭

"ব্ৰহ্মডাঙার মাঠ" --ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়

যে সময়কার কথা বলছি তখন আমার বয়স চোদ্দ-পনেরোর বেশি নয়। মাকড়দার কাছেই আছে ঝাঁপড়দা। নামটা শুনলেই তখন হাসি পেত। তা সেই ঝাঁপড়দাতে আমাদের এক বন্ধু ছিল, তার নাম ক্যাবা। ক্যাবলাকান্ত থেকে ক্যাবা কিনা জানি না, ওই নামেই তাকে ডাকত সবাই । তা সেই বন্ধুটি বেঙড়পাড়ায় মুড়িউলি মাসির বাড়িতে আসত বলেই তার সঙ্গে আমার এবং আমার বন্ধুদের পরিচয়।
সে যাই হোক, একদিন ক্যাবা আমাদের ধরে বসল দু-একদিনের জন্য ওদের গ্রামে যেতে হবে। ওর এই আমন্ত্রণে আমরা কেউ না করলাম না। গোরা, আমি আর পল্টন তিনজনেই লাফিয়ে উঠলাম। যেহেতু মুড়িউলি মাসির বোনপো, তাই বাড়িতেও কেউ এই যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করল না। মুড়িউলি মাসির বাড়ি নার্নায়। ক্যাবাদের দক্ষিণ ঝাঁপড়দায়। আমাদের হাওড়া শহর থেকে জায়গাটার দূরত্বও বেশি নয়।
একদিন সকালে ক্যাবার সঙ্গেই আমরা চললাম ওদের দেশে। তখন হাওড়া ময়দান থেকে মার্টিন কোম্পানির ট্রেন চালু ছিল। সেই ট্রেনে চেপে আমরা ঘণ্টা দেড়েকের জার্নির পর ডোমজুড়ে এসে নামলাম।
ডোমজুড় তখন এত উন্নত ছিল না। চারদিকে মাটির অথবা ছিটেবেড়ার ঘর এবং বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। এইখান থেকে দক্ষিণ ঝাঁপড়দা হয়ে একটি বনপথ সোজা চলে গেছে নানার দিকে। নার্নার পঞ্চানন্দ হলেন অত্যন্ত জাগ্রত।
যাই হোক, সেই পথ ধরে একসময় শ্মশান পার হয়ে একটি গ্রামে এসে পৌঁছলাম আমরা। সেইখানে অনেক সুপ্রাচীন বট ও অশ্বত্থের সমারোহ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। তারই মাঝে বহুদিনের পুরনো একটি ভগ্নদশাপ্রাপ্ত বাড়িতে এসে ঢুকলাম আমরা।
ক্যাবা বলল, “এই আমাদের বাড়ি।” বাড়ির চেহারা দেখে বুক শুকিয়ে গেল। এ তো ভূতের বাড়ি। এই বাড়িতে কোনও মানুষ বাস করে? বাড়ির ইটগুলো সব নোনা লেগে ঝরে পড়ছে। কোথাও জোরে একটু শব্দ হলেও বোধ হয় ভেঙে পড়বে বাড়িটা। এই বাড়ির দোতলার একটি ঘরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হল।
সব দেখেশুনে গোরা বলল, “খুব জোর একটা রাত, তার বেশি নয়। কাল সকাল হলেই পালাব আমি।”
পল্টন বলল, “এ নির্ঘাত ভূতুড়ে বাড়ি। আজ রাতে ভূত এসে যদি আমাদের গলা টিপে না মারে তো কী বলেছি।”
আমি বললাম, “তার চেয়েও বেশি ভয় হচ্ছে আমার সাপ অথবা বিছের।” যে ঘরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল সেই ঘরে সাবেক কালের একটা পুরনো পালিশ ওঠা ভাঙা খাট ছিল। তাতে ছিল দুর্গন্ধযুক্ত তেলচিটে বালিশ আর চটের ওপর ছেড়া কাঁথা বিছানো গদি। এই বিছানায় শুতে হবে ভেবেও গা যেন ঘুলিয়ে উঠল।
একটু পরে ক্যাবা আমাদের নীচে নিয়ে গিয়ে ওর বাবা-মা'র সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। ওঁরা সবাই খুব খুশি হলেন আমাদের দেখে। ক্যাবার মা বললেন, “গরিবের বাড়িতে কেউ তো আসে না বাবা, তোমরা এসেছ বলে খুব আনন্দ হচ্ছে আমার। আমাদের ঘরদোর ভাল নয়, বিছানাপত্তর ভাল নেই। খুব কষ্ট হবে তোমাদের।”
ক্যাবার মায়ের আন্তরিকতাপূর্ণ কথা শুনে মন ভরে গেল আমাদের। সত্যিই স্নেহময়ী জননী তিনি। বললাম, “তাতে কী ? ও আমরা ঠিক মানিয়ে নেব।”
ক্যাবার মা বললেন, “যাও, কুয়োতলায় গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে এসো। আমি তোমাদের জলখাবারের ব্যবস্থা করি।”
আমরা ক্যাবার সঙ্গে কুয়োতলায় গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে নিলাম। ও দড়ি-বালতি নিয়ে জল তুলে দিতে লাগল। আমরাও জল খরচ করতে লাগলাম। তারপর গামছায় মুখ-হাত মুছে ঘরে আসতেই ক্যাবার মা আমাদের প্রত্যেককে মেঝেয় আসন পেতে বসিয়ে গরম গরম লুচি, আলুভাজা, বোদে আর পানতুয়া খেতে দিলেন। খুব তৃপ্তির সঙ্গে আমরা খেয়ে নিলাম সেগুলো ।
খাওয়াদাওয়া হলে আমরা ক্যাবার সঙ্গে গ্রামের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। এখানে এত ঘন ও বড় বড় গাছ চারদিকে যে, মনে হল এর পত্রছায়া ভেদ করে সূর্যের আলো বোধ হয় কারও ঘরে কখনও ঢোকে না। দিনমানেও তাই অন্ধকার।
যাই হোক, এইভাবে আমরা সারা গ্রাম তোলপাড় করে একসময় স্টেশনের দিকে এগোলাম ।
এখানটা তবু জমজমাট। চাঁপাডাঙার দিকে যাওয়ার জন্য একটি ট্রেন তখন তার দেশলাই খোলের মতো শরীর নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। আমরা যাওয়ার পরই হুইসল দিয়ে নড়ে উঠল ট্রেনটা। আর তার একটু পরেই চারদিক থেকে রব উঠল, গেল-গেল-গেল।
কী ব্যাপার? না, স্টেশন থেকে বেরিয়ে দক্ষিণবাড়ির মাঠের দিকে যেতে গিয়ে একটা ছাগলকে চাপা দিয়ে উলটে গেছে ট্রেনটা।
আমনই ছোট-– ছোট— ছোট।
অনেক লোকের সঙ্গে আমরাও ছুটলাম। কতকগুলো লোক ট্রেনের মাথায় বসে ঠ্যাং ছড়িয়ে বিড়ি বাঁধতে বাঁধতে যাচ্ছিল, তাদেরই অনেকে ছিটকে ছুটকে পড়ায় লেগেছে খুব। বাকি যারা, তারা ট্রেনের কামরা থেকে সামান্য আঘাত পেয়ে বেরিয়ে এসে দড়ি বাঁশ ইত্যাদি নিয়ে চেষ্টা করছে আবার কামরাগুলোকে লাইনের ওপর তুলে বসানোর জন্য। একটা বোকা পাঠা এমনভাবে কাটা পড়েছে যে, তার ধড় একদিকে মুণ্ডু আর একদিকে হয়ে গেছে।
যাই হোক, প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় কাত হওয়া দু-তিনটে বগিকে ঠিকভাবে বসানো হল।
আবার নড়ে উঠল ট্রেন। আমরাও বিদায় নিলাম। দুপুরবেলা স্নানপর্ব শেষ হলে মধ্যাহ্নভোজন। কাসার থালায় মোটা চালের ভাত। বড় জামবাটিতে করে পেয়াজ দিয়ে মুসুর ডাল। এছাড়া শাকভাজা, আলুভাজা, ঢ্যাঁড়সভাজী। পোস্তর চচ্চড়ি, শোলমাছের ঝোল আর আমের চাটনি তো ছিলই সময়টা তখন গরমের দিন। বৈশাখ মাস।
আমরা বেশ পরিতৃপ্তির সঙ্গে খাওয়াদাওয়া সেরে সুপুরি এলাচ মুখে দিয়ে ওপরের ঘরে শুতে এলাম। এতক্ষণে কিন্তু পরিবেশটা আমরা মানিয়ে নিতে পেরেছি। খাটে না শুয়ে ঘরের মেঝেয় মাদুর পেতেই আমরা শুয়ে পড়েছি। শুয়ে শুয়ে কত গল্পই না হল আমাদের! বেশি গল্প করতে লাগলাম ট্রেন ওলটানোর ওই ব্যাপারটা নিয়ে। ভাগ্যে বগিগুলো সব কাত হয়েছিল, না হলে কেউ না কেউ মরতই।
পল্টন বলল, “রেল দুর্ঘটনায় মরলেই লোকগুলো সব ভূত হত।”
গোরা বলল, “তা কেন হবে ? ওরা হত কন্ধকাটা।”
আমি বললাম, “বা রে! কন্ধকাটা বুঝি ভূত নয়?”
ক্যাবা বলল, “যতক্ষণ না কেউ নিজে থেকে রেললাইনে মাথা দিয়ে গলা না কাটাবে ততক্ষণে সে কন্ধকাটা হবে না।
তবে অপঘাতে মরলে অন্য ভূত সে হবেই।”
আমাদের যখন এইরকম সব আলোচনা হচ্ছে তখন হঠাৎই নাদাপেটা কদমছাঁটা একটা ছেলে এসে ক্যাবাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে চুপিচুপি ফিসফিস করে কী যেন বলল।
শুনেই তো লাফিয়ে উঠল ক্যাবা। বলল, “দারুণ হবে রে! কোথায় করবি ? ব্রহ্মডাঙার মাঠে ? তবে আর দেরি কেন? জোগাড়যন্তর কর সব।”
ছেলেটা চলে যেতেই ক্যাবা এসে বলল, “আজ রাতে একটা জোর পিকনিক হবে আমাদের। খালধারে ব্রহ্মডাঙার মাঠে। তোরাও থাকবি।”
পল্টন বলল, “বলিস কী রে! তা মেনুটা কী শুনি?”
“গরম ভাত, পাঁঠার মাংস আর আমের চাটনি।”
গোরা বলল, “চাঁদা কত করে? পাঠার তো অনেক দাম।”
ক্যাবা বলল, “তেল-নুনটা ঘর থেকেই জোগাড় হয়ে যাবে। চালেরও অভাব হবে না। আমও আছে গাছের ডালে, দু-চারটে পেড়ে নিলেই হবে। কিনতে হবে শুধু গুড়, চিনিটা। মাংসটা তো ফাউ। অর্থাৎ কিনা তখনকার সেই কাটা পড়া পাঠাটাই হবে আজ রাতে আমাদের খোরাক। আমার বন্ধু ওই হেবোটা সবার নজর এড়িয়ে সরিয়ে নিয়ে এসেছে পাঁঠাটাকে। অমন নধর পাঠা সচরাচর পাওয়া যায় না। সত্যি, ভোজটা যা হবে না!”
ক্যাবার কথায় গোরা, পল্টন উৎসাহিত হলেও আমার মন কিন্তু সায় দিল না। বললাম, “দ্যাখ, খাওয়ার জন্য একটা পাঠাকে যদি কাটা হয় বা ঠাকুর দেবতার থানে বলি দেওয়া হয়, সে আলাদা কথা। কিন্তু রেলে কাটা পড়া বা অন্য কোনওভাবে অপঘাতে মরা কোনও প্রাণীর দেহ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ না করাই ভাল।”
ক্যাবা বলল, “দুর বোকা, কেটে খাওয়া আর রেলে কাটা পড়া একই ব্যাপার হল। কিছুই হবে না ওতে। চল তো !”
আমার গা ঘিনঘিন করলে কী হবে, গোরা আর পল্টনের দেখলাম উৎসাহ খুব। অগত্যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতেই হল ওদের সঙ্গে।
ব্ৰহ্মডাঙার মাঠে তখন হেবো ছাড়াও আরও দু-তিনজন জড়ো হয়েছে। সবাই মিলে একটা গাছের ডালে পাঠাটাকে ঝুলিয়ে তার ছাল-চামড়া ছাড়াতে লেগে গেছে।
এই করতে-করতেই বেলা কাবার। সন্ধেবেলা মাঠে গর্ত করে সেই গর্তের মুখে ইট বসিয়ে উনুন তৈরি করা হল। তারপর শুকনো ডালপাল জোগাড় করে তাই জ্বাল দিয়ে শুরু হল রান্নাবান্না। দেখতে দেখতে আমরা প্রায় দশ-বারোজন হয়ে গেলাম। আমের চাটনি, ভাত আগেই তৈরি হয়েছিল। গরম গরম মাংস রান্না হলেই শুরু হবে খাওয়াদাওয়া। কুমোরদের বাড়ি থেকে কিছু মাটির গেলাস চেয়ে আনা হয়েছিল। একটা বালতিতে করে নিয়ে আসা হয়েছিল এক বালতি জল। ক্যাবা একটা কলাগাছ থেকে কতকগুলো পাতা কেটে এনেছিল। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেল খেতে বসবার সময়।
গরম মাংসর হাঁড়ি উনুন থেকে যেই না নামানো আমনই শুনতে পেলাম, “ব্য-ব্যা-ব্যা।” চমকে উঠলাম সবাই, এত রাতে ব্ৰহ্মডাঙার মাঠে কাদের ছাগল ডাকে? যেমন-তেমন ডাক নয়, অস্তিমের ডাক বলির আগে পাঠারা যেভাবে ডাকে, ঠিক সেইরকম। আর তারপরই মনে হল, মাঠময় কী যেন ছুটে বেড়াচ্ছে।
একটু পরেই হঠাৎ একটা ঢিপ করে শব্দ। যেন ভারী কিছু একটা লাফিয়ে পড়ল গাছের ডাল থেকে। আমাদের সঙ্গে দুটো হ্যারিকেন ছিল। সে দুটোও নিভে গেল দপদপিয়ে। আর সেই অন্ধকারে আমরা দেখতে পেলাম কিম্ভূতকিমাকার একটা মূর্তি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রান্না হওয়া সেই মাংসর হাঁড়িটার দিকে।
আমরা তখন আর আমাদের মধ্যে নেই। বাবা রে মা রে করে যে যেদিকে পারলাম পালালাম। ক্যাবা, আমি, গোরা আর পল্টন এক ছুটে ওদের বাড়িতে।
ক্যাবার মা তো সব শুনে খুব বকলেন ক্যাবাকে। বললেন, “বলিহারি রুচি তোদের! অপঘাতে মরা কোনও প্রাণিদেহর মাংস কেউ খায় ? তার ওপরে ভর সন্ধেবেলা তোরা গেছিস ব্রহ্মডাঙার মাঠে। ওটা যে একটা দোষান্ত মাঠ তা বুঝি ভুলে গিয়েছিস ?”
আমরা সবাই মাথা হেঁট করে বকুনি হজম করলাম। যাই হোক, সে রাতে মাংস-ভাতের বদলে দুধ-ভাত খেয়েই শুতে গেলাম আমরা। পরদিন সকাল হতেই আমরা বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
পরে—অনেক পরে ক্যাবার মুখে শুনেছি, একটা মুণ্ডহীন ছাগলকে প্রায়দিনই সন্ধের পর রেললাইনের ধারে অথবা ব্ৰহ্মডাঙার আশেপাশে তার ছায়াশরীর নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সে কারও ক্ষতি করে না, ভয় দেখায় না, ডাকেও না। শুধু দেখা দেয় আর মিলিয়ে যায়। তবে আমরা কিন্তু আর কখনও ও-মুখো হইনি।
(সমাপ্ত)

পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থান এরিয়া ৫১

রহস্য হলো এমন কিছু যা সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। পৃথিবীতে রহস্যের শেষ নেই। আর এইসব রহস্য নিয়ে মানুষের কৌতুহলেরও শেষ নেই। আজও মানুষেরা অনেক রহস্যের কূলকিনারা খুজে পায় নি। অনেক কিছুর রহস্য আবিষ্কার করলেও অইসব জিনিসের ব্যাখ্যাও সঠিকভাবে দিতে পারে নি। যার কারনে আজও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র কিছু রহস্যের ব্যাখ্যা পাবার জন্য।
“এরিয়া ৫১” এমন ই একটি স্থান, যা সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারনা নেই। যা নিয়ে মানুষ এর কৌতুহলেরও শেষ নেই। “এরিয়া ৫১” বহুল আলোচিত মার্কিন বিমান ঘাঁটি। এটি নিয়ে ঠিক কবে থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। এরিয়া ৫১ এমন একটি স্থান যেখানকার ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাধারন মানুষের চলাচল নিষেধ। দুর্ভেদ্য বেষ্টনীতে ঘেরা ঘাঁটিতে আজ পর্যন্ত বেসামরিক কেউ প্রবেশের দাবি করেনি। মার্কিন বিমান বাহিনি ঠিক কোন কারনে এই বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে তারও কোনো সঠিক ব্যাখ্যা নেই।
ভিনগ্রহের প্রানী এলিয়েন নিয়ে মানুষ এর কৌতুহলের সীমা নেই। কিন্তু নানা ধরনের গুজব-গুঞ্জন তখনি ডালপালা মেলতে শুরু করে যখন শোনা গেলো মার্কিন গোপন বিমান ঘাঁটি “এরিয়া ৫১” নাকি ঘুরে গেছে এলিয়েন এর দল। ঘাঁটিটি থেকে অনেক উচ্চতায় নাকি অজ্ঞাত উরন্ত বস্তু “ইউএফও” এর দেখাও মিলেছে। এর পর থেকেই এ জায়গা আরো রহস্যময় হয়ে উঠে। কিন্তু এইসব কথাগুলো আদৌ সত্য কিনা তা নিয়েই সন্দেহের সীমা নেই। ধারনা করা হয় এখান থেকে এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।
সবচেয়ে রহস্যময় হলো এই জায়গাটুকু পৃথিবীর মানচিত্রে পাওয়া যায় নাহ এমনকি গুগল আর্থ এও নাই। আমেরিকার নেভাদা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাংশে লাস ভেগাস থেকে ১৩৩ কিলোমিটার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে গ্রুম হ্রদের দক্ষিনতীরে এরিয়া ৫১ এর অবস্থান। ২০১৩ সালে “সিআইএ” সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে এরিয়া ৫১ এর কথা স্বীকার করে। ঠিক কবে থেকে মার্কিন এ গোপন ঘাঁটি “এরিয়া ৫১” নামে মানুষের নিকট পরিচিতি লাভ করে তা জানা যায় নি। অতীতের বিভিন্ন পত্রিকা, নথিপত্র ঘাটাঘাটি করে জানা যায়, পরীক্ষামুলকভাবে বিভিন্ন উড়োজাহাজ,ভারী অস্ত্র-শস্ত্র তৈরির কাজে এ ঘাঁটি ব্যবহার করা হয়। ২০০৯ সালে এরিয়া ৫১ থেকে অবসরপ্রাপ্ত কিছু কর্মকর্তা মানুষের কৌতুহল নিবারনের জন্য বলেছিলেন, এখানে মানবজাতির জন্য ক্ষতিকারক কিছুই করা হচ্ছে নাহ। নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় নিজেদের প্রযুক্তি উন্নত করার জন্য গবেষণার কাজগুলো অতি গোপনীয়তার সঙ্গে করা হচ্ছে। এখানে নাকি চন্দ্র মডিউল,সামরিক বিমান ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু কথাগুলো আদৌ সত্য না মিথ্যা তা বোঝার উপায় নেই।
কিন্তু যে গোপনীয়তার সহিত পুরো পৃথিবী হতে এলাকাটি নিশ্চিহ্ন করা তার কারনেই রহস্যের অন্ত নেই। নীল আর্মস্ট্রং এর চন্দ্র অভিযানের যে ইতিহাস, তাও নাকি পুরোটাই সাজানো একটি নাটক। এ নাটকের মঞ্চ হিসেবে নাকি ব্যবহৃত হয়েছিলো এরিয়া ৫১ নামের রহস্যঘেরা এ ঘাঁটির। আসলে অনেক খবর বের হয় এই এরিয়া ৫১ নিয়ে কিছু মিথ্যা কিছু সত্য, কিন্তু কোনগুলো মিথ্যা আর কোনগুলো সত্য তা না জানার কারনেই আজও এইসব রহস্যের জালে বন্দি।

এরিয়া ৫১ নিয়ে নানা গল্প শোনা যায়, সেগুলো রুপকথা না আদৌ ঘটেছে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এরিয়া ৫১ নিয়ে সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম হয় মানুষের চাঁদে যাওয়া নিয়ে। নীল আর্মস্ট্রং এর চন্দ্র অভিযানের যে ইতিহাস সেটা নাকি পুরোটাই একটি সাজানো নাটক। যে নাটকের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো এরিয়া ৫১।
অ্যাপোলো রকেট ডিজাইন করা কোম্পানি রকেটডাইন এর একজন ইঞ্জিনিয়ার ও পর্যবেক্ষক বিল কেইসিং এর লেখা “উই নেভার ওয়েন্ট টু দি মুন” শিরোনামের বইটি ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। এ বইয়ে লেখক দাবি করেন, অ্যাপোলো মিশন ছিলো বড় একটা মিথ্যা। পুরোটাই আইওয়াশ। তিনি নানা বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে প্রমান করার চেষ্টা করেন যে বাস্তবে ওই অভিযানের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। শুধুমাত্র বিল কেইসিং ই নন, আরো অনেকেই এই কথা বলেছেন। ষাটের দশকের নাসায় কর্মরত মহাকাশচারী এবং ও অ্যাপোলো মিশনের সায়েন্টিফিক এডভাইজার ‘ব্রাইয়ান ওলেরি’ বলেন, “আমি শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে সত্যিই কি তাঁরা চাঁদে গিয়েছিলো”। সবচেয়ে বেশি মজার বিষয় হলো, খোদ আমেরিকার ২০ শতাংশ মানুষ নীল আর্মস্ট্রং এর চন্দ্র অভিযানের প্রচলিত গল্প বিশ্বাস করে না।
তাহলে এত দিন ধরে যা জেনে আসছিলাম, সেটার পুরোটাই কি একটি সাজানো গল্প? রহস্যের সমীকরণ খুঁজে পেতে চলুন ফিরে যাই চার দশক আগে, যখন আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মাঝে শীতল যুদ্ধ চলছিল। দুই দেশই তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছিল। 14543327_1578732342435444_1930088540_nযু্দ্ধজয়ে মরিয়া দুই পক্ষই। তৎকালীন এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো যে, যে দেশ আগে মহাকাশে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে তারাই জয়ী হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর পৃথিবী থেকে প্রথম স্যাটেলাইট ‘স্পুটনিক ‘ মহাকাশে পাঠায়। মহাকাশে সোভিয়েত ইউনিয়নের এমন সাফল্য দেখে মাথাচারা দিয়ে উঠে আমেরিকা। বিল কেইসিং এর মতে ওই সময়ের প্রযুক্তিতে চাঁদে যাওয়া এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসার সম্ভাবনা ০.০০১৭ শতাংশ। কিন্তু এই সোভিয়েত ইউনিয়নকে দমানোর জন্যই নাকি এই অ্যাপোলো মিশন।
কথা হলো গিয়ে, অ্যাপোলো মিশন যদি মিথ্যা হয় তাহলে আমেরিকা কিভাবে এত বড় মিথ্যাকে সত্যে রুপান্তরিত করে পৃথিবীতে প্রকাশ ঘটালো। বিল কেইসিং এর মতে, “অ্যাপোলো মিশনে মহাকাশযানগুলো মহাকাশে গিয়েছিলো। কিন্তু চাঁদে মানুষ পাঠানো হয় নাই। অ্যাপোলো-১১ মহাকাশযানটি ৮ দিন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরেছিল। এরপর মুলযানটি আলাদা হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। আর টিভিতে যেটা দেখানো হয়েছিলো তা ছিলো পূর্বে ধারন করা। অনেকেই বলেন এটি ছিলো খুব বড় বাজেটের একটি নাটক যা এরিয়া ৫১ নামের মার্কিন গোপন ঘাঁটিতে মঞ্চায়িত হয়। এইসব কথাগুলোর পক্ষে যুক্তিরও অভাব নেই। কিন্তু কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তার কোন সঠিক তথ্য এখনো কেউ জানেনা ।

আগের দুই পর্ব থেকে আমরা জেনেছি যে  এরিয়া ৫১ রহস্যের অন্তরালে থাকা একটি ঘাঁটি যা আমেরিকায় অবস্থিত। এখানে কি কাজ করা হয় এত গোপনীয়তা মান্য করে সেটার রহস্যই আজ পর্যন্ত কেউ জানে  না।  রহস্যের ডামাঢোল বাজানোর যেই কারন তা হলো মানুষ আদৌ চাঁদে গিয়েছে কিনা? আর না গিয়ে থাকলে সেটার মঞ্চায়ন এরিয়া ৫১ তেই হয়েছে কিনা? আসলে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রতেই এইসবের প্রমান পাওয়া যায় না। বিচার করতে হয় যুক্তি দিয়ে। আর যেহেতু একেকজনের যুক্তি একেকরকম, তাই রহস্য আজও বিদ্যমান।
১৯৭৭ সালের ২ জুন হলিউডে মুক্তি পায় ” কেপ্রিকন ১” নামের একটা ছবি। ৫০ লাখ মার্কিন ডলার বাজেটের মুভিটির দৃশ্য আর চাঁদ থেকে পাঠানো মহাকাশচারীদের ভিডিওর সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। প্রযোজক পল এন ল্যাজারুসের মতে, নাসা ৪০ বিলিয়ন বাজেটের প্রোগ্রাম অ্যাপোলো মিশনে যে ভিডিও দেখিয়েছে, সেটা তারা মাত্র ৪ বিলিয়ন বাজেট নিয়ে করে দেখিয়েছে তাও আবার একটা টিভি স্টুডিও তে। আবার বিল কেইসিং এর মতেও চন্দ্র অভিযান হয় নি, এটাকে নাটকের আকারে সাজানো হয়েছে। আসলে সন্দেহের মুল কারন অনেক কিছুই আছে। যেমন,নাসার সরবরাহ করা ফুটেজে দেখা যায় দুটি বস্তুর ছায়া পরস্পরকে ছেদ করেছে।অথচ তা আলোর উৎস হওয়ায় সমান্তরাল হওয়ার কথা। এমনই হাজারো রহস্য আজও লুকিয়ে আছে। প্রমান করার জন্য যুক্তি অনেক উঠানো যায়, কিন্তু বিশ্বাস করার দায়িত্ব তো আপনার।
এরিয়া ৫১ এর অস্তিত্বের কথা স্বীকারঃ গত বছর সিআইএ একটি নথি উন্মুক্ত করে যার মধ্যে এরিয়া ৫১ এর কথা স্বীকার করা হয়েছে। তবে সেখানে একটি কথা পরিষ্কার করা হয়েছে এবং তা হলো যে এরিয়া ৫১ এ  ভিনগ্রহের প্রানীরা যাতায়াত করতো নাহ। বরং “ইউ-২” নামের গুপ্তচর বিমানের একটি প্রকল্প পরিচালনায় ব্যবহৃত হতো জায়গাটি। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর নজরদারি করাই ছিলো যেটার মুল উদ্দেশ্য।
তথ্য অধিকার আইনের আওতায় সিআই এর কাছ থেকে  এসব তথ্য পেয়েছে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় নিরাপত্তা মহাফেজখানা। ২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট প্রকাশ করা ওই নথিতে বলা হয়, গোপন-গুপ্তচর বিমান এর পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য ১৯৫৫ সালে নেভাদার জনশূন্য মরুভুমিতে “এরিয়া ৫১” নামের বর্তমান এই জায়গাটি বেছে নেয়া হয়।

নথিতে বলা হয়, অতি উচ্চতায় তাদের এইসব গুপ্তচর বিমান ওড়ানোর ফলে একটি গুজব অতিদ্রুত ছড়িয়ে পরলো যে ভিনদেশি প্রানীরা নাকি আমেরিকা ঘুরে গেছে। আসলে হয়েছিল কি, তৎকালীন বানিজ্যিক বিমানগুলো সাধারনত ১০-২০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তো। বি-৪৭ মডেলের যুদ্ধবিমানগুলো উড়তো ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায়। কিন্তু সেখানে ‘ইউ-২’ বিমানগুলো উড়তে পারতো ৬০ হাজারফুট উপর দিয়ে, যার কারনে সাধারন মানুষের ধারনা করতে সময় লাগে নাই যে এটি সাধারন কোনো বিমান নয়, নিশ্চয়ই ভিনদেশ থেকে এসেছে। অতি গোপন এই প্রকল্পের কথা যাতে ফাঁস না হয় সেইকারনে তখন চুপ ছিলো সিআইএ। এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর হয়তো সামনেই বের হবে। যতই তারা এরিয়া ৫১ এর কথা স্বীকার করুক, সাধারণ মানুষ এর মনে আজও সন্দেহ জাগবে তাহলে এখন কি করা হচ্ছে এরিয়া ৫১ এ ? কেন আজও এত নিরাপত্তা দিয়ে ঘেরাও করা ওই এরিয়া ৫১? মনের মধ্যে প্রশ্ন উঠা সাধারন ব্যাপার, কিন্তু এইসব প্রশ্নের উত্তর যখন সারা পৃথিবীর মানুষের নিকটই অজানা থাকে তখনই তাকে সবচেয়ে রহস্যময় বলা যায়।
তথ্যসূত্র: বাংলা ইনিশিয়েটর

রহস্যে ঘেরা জুজু

জুজু কি ? প্রথমেই বলে রাখি, ‘জুজু’ শব্দটা বাংলা সাহিত্যে একটা বাগধারার মত ব্যবহৃত হয় । ইংরেজি bogus boo এর মতই বাংলায় জুজু শব্দটি কোনো একটা কাল্পনিক ভয়াবহ জিনিস বুঝাতে ব্যবহৃত হয় । ছোট বাচ্চাদের পানির কাছাকাছি/বিপজ্জনক কোনো জায়গায় যেতে সব মায়েরাই নিষেধ করেন । বাচ্চারা না শুনলে ইংল্যান্ডের মায়েরা তখন বলেন, ওখানে যেয়ো না, ওখানে বোগাস বু আছে । বোগাস শব্দের আভিধানিক অর্থই হচ্ছে মিথ্যা/ভুয়া । পানির কাছে ভৌতিক কিছু নেই আসলে । বাচ্চাটাকে নিরুতসাহিত করতেই ওর মা বোগাস বু নামক কাল্পনিক ভূতের ভয় দেখাচ্ছে।
বাংলা সাহিত্যেও জুজু সেই রকম কাল্পনিক ভূতের অর্থে ব্যবহৃত হয় । উদাহরন স্বরুপ জুজু শব্দের ব্যবহারকে আরো ভালো কর বোঝানোর জন্য কয়েকটি বাক্য তৈরি করে দেখাচ্ছি ।
১. ‘প্রতিবেশী দেশ নিয়ে পুরনো জুজুর গল্প শুনতে শুনতে বিরক্তি ধরে গেছে’ 
২. ‘ছোটবেলা থেকেই আপনার ভেতরে যদি জুজু ঢুকে যায় যে আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা,আমি ভাল ছাত্রনা—তাহলে সেই জুজু আপনি কাটাতে পারবেন না । জীবনে উন্নতি করার জন্য সবার আগে মন থেকে জুজু তাড়াতে হবে’
এখানে জুজু শব্দের ব্যাবহার ১নং বাক্যে মিথ্যা ও ২য় বাক্যে এ ভয় এর বিপরীত এ ব্যাবহার করা হয়েছে।  আশা করি বাংলায় জুজু শব্দের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে আপনাদের ।
বাংলায় এই  ‘সাহিত্যের জুজু’  বাদেও একটা  ‘আক্ষরিক জুজু’  রয়েছে ।  জুজু মূলত এটা একটা আঞ্চলিক শব্দ । সিলেট এলাকার মানুষ জুজু নামের এক বিশেষ প্রকৃতির রহস্যময় প্রানীর কথা বলে থাকেন । বাংলাদেশের অন্য এলাকায় এই ধরনের জুজুর কথা শোনা যায়না । মোটামুটি যা জানা যায় তা হল -জুজু লোমশ একটা জীব । এর চোখ লাল টকটকে । ছোট বাচ্চাদের দিকেই এর নজর বেশী । 
রেডিও ফুর্তির  ভূত এফ এম নামক প্রোগ্রামে সিলেট চা বাগানের এক লোক এসেছিলেন একবার । জুজুকে নিয়ে তিনি যা যা শুনেছেন তাই শেয়ার করেছিলেন । ভূত এফ এম এ বর্ননা করা গল্প থেকে জানতে যায় –
এক মহিলা তার বাচ্চা কে ঘুম পাড়িয়ে আরেক রূমে টিভি দেখতে চলে গেল । কাজের মেয়েটা বাচ্চার রূমে এসেই গলা ফাটিয়ে একটা চিত্কার দিল । মহিলা দৌড়ে রূমে এসে দেখলেন কাজের মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে , আর লোমশ একটা জীব বাচ্চাটাকে জানালা দিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে । বাচ্চাটা হাত পা ছোড়াছুড়ি করছিল । মহিলাকে দেখেই জীবটা বাচ্চাটাকে ফেলে লাফ দিয়ে চা বাগানের ভিতর হারিয়ে যায় । জুজু ব্যাপারে আরেকটা ঘটনায় জানা যায়,  এক বাচ্চা কোন কারণে খাবার খেতে চাইছিলনা । তার মা তাকে জোর করে খাওয়াতে চেষ্টা করছিলেন । এক পর্যায়ে মহিলা বললেন ,” তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও । না হলে জুজু আসবে ।” কাছেই একটা চা বাগান থেকে একটা শব্দ মহিলা শুনতে পেলেন , “জুজু আসবে ।” মহিলা এটাকে পাত্তা দিলেন না । মনের ভূল কথাটা উড়িয়ে দিলেন । খানিক পর বাচ্চাটা আবার বাহানা শুরু করলে মহিলা বিরক্ত হয়ে বললেন , “এই খাও বলছি । জুজু আসবে কিন্তু বলে দিলাম ।” এবার মহিলা আগের বারের মতই কিন্তু অনেক কাছে শব্দ শুনলেন যে ,” জুজু এসেছে !” মহিলা ভয় পেয়ে গেলেন । ব্যাপারটা তার স্বামীকে বলার জন্য বাচ্চাটাকে ডাইনিং রুমে বসিয়ে অন্য রুমে গেলেন । তিনি যখনই তার স্বামীকে শব্দের ব্যাপারটা বলছিলেন , হঠাত্ তারা দুজনই শেষ বারের মত শব্দটা শুনলেন । এইবার শব্দটা ছিল এরকম : “জুজু খাচ্ছে !” “জুজু খাচ্ছে !” তারা দৌড়ে ডাইনিং রুমে গেলেন । গিয়ে দেখলেন , কালো লোমশ একটা প্রাণী জানালা দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে । আর তাদের বাচ্চা ? বাচ্চাটাকে অর্ধেক খেয়ে ফেলা হয়েছে ! জুজু নিয়ে চা বাগানের এটাই সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনা । চা বাগানে প্রায়ই কাজ করার সময় ছোট ছোট বাচ্চা নিখোঁজ হয় । পরে তাদের মাথা কাটা লাশ পাওয়া যায় । কার কাজ কেউই জানে না।

বন্ধুরা আজ আমরা  জুজু সর্ম্পকে সম্ভাব্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানব-
আমরা আমাদের আশেপাশে যে কোনো প্রানীর  অনেক গুলো প্রজাতিকেই দেখতে পাই ।প্রতিটা প্রজাতি একে অপরের থেকে একটু আলাদা । বিজ্ঞানীরা প্রতিটা আলাদা প্রজাতির জন্য আলাদা আলাদা বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছেন । এইভাবে এদেরকে একে অপর থেকে সহজে আলাদা করা যায় । উদাহরন হিসবে আমরা প্যাচার কথা বলতে পারি ।বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির প্যাচা রয়েছে । এগুলো হল-হুতুম প্যাঁচা (Bubo bengalensis), ভূতুম প্যাঁচা (Ketupa zeylonensis), লক্ষ্মীপ্যাঁচা (Tyto alba), খুঁড়ুলে প্যাঁচা (Athene brama), কুপোখ (Ninox scutulata), নিমপোখ (Otus lepiji)। কোবরা সাপ আছে ১০ প্রজাতির। আর কুকুর,বিড়াল কিংবা কবুতরের প্রজাতি হিসাব করতে গেলে সেটি কয়েক শততে পৌছাবে ।  
তবে এইখানে ‘প্রজাতি’র সংজ্ঞা একটু পরিষ্কার হয়ে নেওয়া ভাল । প্রজাতি হচ্ছে জীব জগতের শ্রেনীবিন্যাসের সেই সর্বনিম্ন শ্রেনী ,যেখানে জীবেরা একে অপরের সাথে যৌন মিলন করে একই প্রজাতির অপর একটি fertile (সন্তান জন্ম দিতে পারবে এমন) সন্তান জন্ম দিতে পারে । ২ টা পাতি কাক একে অপরের সাথে মিলনের মাধ্যমে নতুন একটা পাতি কাক জন্ম দিতে পারবে, কিন্তু দাড় কাকের সাথে পাতি কাকের মিলনে কোন বাচ্চা হবেনা ,কারন পাতি কাক আর দাড় কাকের প্রজাতি আলাদা । তবে কখনো কখনো ২ টা আলাদা প্রজাতির মিলনে সন্তান হতে পারে, তবে সেই সন্তান fertile হয়না । সেই নতুন বাচ্চা থেকে আর কোনো নতুন বাচ্চা হয়না । যেমন-ঘোড়া আর গাধার মিলনে খচ্চর জন্ম নেয় । রুই মাছ আর কাতল মাছের মিলনে জন্মায় কালিবাউশ মাছ । খচ্চর বা কালিবাউশ, এদের কারোরই সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারন এরা আলাদা প্রজাতির বাবা-মা থেকে এসেছে ।
আমাদের আশেপাশের প্রতিটি প্রানীরই একাধিক প্রজাতি রয়েছে ।কিন্তু মানুষের প্রজাতি কয়টা ? কখনো চিন্তা করেছেন বিষয়টা ?  ঠিক ধরেছেন, মানুষ এর একটাই প্রজাতি আছে পৃথিবীতে আর সেটাই হলাম আমরা। Homo sapiens । বিষয়টা অস্বাভাবিক মনে হয়না ? মানুষের কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অন্যান্য প্রজাতি থাকার কথা না পৃথিবীতে ? বিজ্ঞানীরা বলছেন,অতীতে হোমো স্যাপিয়েন্সের মতই মানুষের আরো কয়েকটা প্রজাতি পৃথিবীতে ছিল । ২ মিলিয়ন বছর আগে Homo ergester ছিল পৃথিবীতে । ১ মিলিয়ন বছর আগেও Homo erectus ছিল , Homo antecessor নামে আরেকটা প্রজাতিও ছিল সেই সময়ে । Homo sapiens এসেছে মোটামুটি ৩ লাখ বছর আগে । ওই সময়ে পৃথিবীতে একই সময়ে জাভা মানব, পিকিং মানব, নিয়ানডারথাল মানবরাও ঘুরে বেড়াত (Homo rhodesiensis, Homo erectus , Homo neanderthalensis)। ধারনা করা হয়  হোমো সাপিয়েন্স এর সাথে যুদ্ধ করে বাকি প্রজাতিগুলো পরাজিত হয়েছে । হোমো স্যাপিয়েন্স তাদেরকে পুরোপুরিই মেরে ফেলেছে । মানুষের ওই প্রজাতিগূলোর কোনো এক পিসও এখন আর পৃথিবীতে বেঁচে নেই । তাদের এক জনকেও আমরা খুজে বের করতে পারিনি । তবে বিশ্বের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় মাঝে মাঝে মানুষের আকৃতির কিছু প্রানী দেখা যায় । এরা প্রায় মানুষের মতই আচরন করে । এমনকি মানুষের গলায় কথাও বলতে পারে মাঝে মাঝে । ধারনা করা হয় এরা মানুষের পরাজিত প্রজাতির অবশিষ্ট প্রানীরা । নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে এরা দুর্গম এলাকায় থাকে। মাঝে মাঝে এক্সিডেন্টালি মানুষের সামনে পড়ে যায় ।

হিমালয়ের তুষারমানব ইয়েতি কে সন্দেহ করা হয় সম্ভাব্য হোমো ইরেকটাস এর বেঁচে যাওয়া বংশধর হিসেবে । খেয়াল রাখবেন, হিমালয় আর সিলেটের পাহাড় কিন্তু একই পাহাড়শ্রেনীর অংশ । আমাদের জুজুর গল্পে যে জিনিসটা চোখে পড়ার মত সেটা হল জুজু মানুষের গলায় কথা বলতে পারে এবং জুজু ২ পায়ে মানুষের মত চলতে পারে । হতেও পারে এরা কোনো Homo প্রজাতির বংশধর । সেক্ষত্রে প্রশ্ন আসে , কেন তারা শুধু বাচ্চাদের এটাক করে ?  বড় মানুষদের এতাক করে না কেন ?  সম্ভবত বড় মানুষদের তারা ভয় পায় । শক্তিতে বা বুদ্ধিতে তারা এডাল্ট মানুষদের সাথে পারবে না বলেই তারা মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকে । তবে শিশুদের কাছ থেকে বিপদের ভয় নেই বলেই হয়তো জুজুরা শিশু ধরে খেতে চায় । এটা জাস্ট একটা হাইপোথিসিস বা সম্ভাব্য বিশ্লেষন । বিস্তারিত অনুসন্ধান ছাড়া কিছু বলা যাবেনা । এমনও হতে পারে চা বাগানের কোনো মা তার পিতৃ পরিচয় বিহীন ছেলেকে নিজেই খুন করে/গ্রাম থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জুজুর গল্প তৈরি করেছিল, এবং কালক্রমে সেটাই কিংবদন্তীতে পরিনত হয়ে গেছে । কোনো নিরেট প্রমান ছাড়া কোন সিদ্ধান্তে আসা যাবেনা । এই বিষয়ে আরো তথ্য দরকার।

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৬

ভূত বিষয়ে কিছু তথ্য

পৃথিবীতে ভূত কি আছে? ভূত কী? ভূত কত প্রকার ও কি কি?
পৃথিবীর একটি বহুল প্রচলিত প্রশ্ন হচ্ছে- ভূত কি আছে?
এই লেখাটি না পড়েই আপনি উত্তর দিতে পারেন, ভূত নেই।
আপনার সাথে আমিও বলবো ভূত নেই। তবে ভূতের ভয় আছে।
এটি একটি রহস্যময় প্রশ্ন এবং রহস্যময় উত্তর। যে জিনিস নেই তাকে আবার ভয় কি? কিন্তু ভূতের বেলায় এসব মানায় না। ভূত নেই কিন্তু ভূতের ভয় আছে। তাহলে একটা গল্প বলি। সত্যি গল্প।

১৯৫৯ সাল। ম্যাবল চিনারি নামে এক ভদ্রমহিলার মা মারা গিয়েছেন কদিন আগে। মায়ের কবর দেখে আবার গাড়িতে উঠবেন। গাড়িতে অপেক্ষা করছেন তার স্বামী। গাড়িতে ওঠার ঠিক আগে স্বামীর ছবি তুললেন। কিন্তু ছবি তোলার পর দেখা গেল গাড়ির পেছনের সিটে বসে আছে তার মা। ক’দিন আগে যে মা মারা গিয়েছেন, একটু আগেই এই মায়ের কবর দেখে এসেছেন। তাহলে গাড়ির পিছনের আসনে কে বসা? মরা মা নিশ্চয়ই কবর থেকে উঠে এসে গাড়িতে বসেননি? এবং এটা সম্ভব নয়। তাহলে কে সে? এই প্রশ্নের উত্তর আজো পাওয়া যায়নি। এবং কখনো পাওয়া যাবে না। যদি আপনি ভূতের বিশ্বাস করেন তাহলে এর জবাব একটাই-গাড়ির পিছনের আসনে একটি ভূত বসা। আর যদি ভূতে বিশ্বাস না করেন তাহলে এর কোনো জবাব নেই। এবং এর জবাব কোনোদিনই মিলবে না।

এবার আরেকটি গল্প বলা যাক।

এস এস ওয়াটারটাউন নামে একটি তেলবাহী জাহাজে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা ঘটল। দুজন শ্রমিক ওই খালি কার্গো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ করছিল। এমন খালি তেলবাহী কার্গোতে গ্যাস জমে যায়। এবং ঘটনা সেটাই ঘটেছিল। ওই বিষাক্ত গ্যাসেই মারা যায় দুই শ্রমিক। জাহাজটি তখন ছিল পানামা খালে। জাহাজের লোকজন ওই দুই শ্রমিককে সাগরে ফেলে দেয়। এটা ১৯২৪ সালের ৪ ডিসেম্বরের ঘটনা। কিন্তু পরদিন সকালে সমুদ্রে ওই দুই শ্রমিকের মুখ ভেসে ওঠে সাগরে। জাহাজের অনেকেই তাদের ওই ভেসে ওঠা চেহারা দেখেছিল। জাহাজ নিউ অরলিন্সে পৌঁছানোর পর জাহাজের ক্যাপ্টেন এই দুর্ঘটনার কথা জাহাজ কোম্পানিকে জানান। কিন্তু এরপর যখন জাহাজটি তার পরবর্তী যাত্রা শুরু করল, তখনও সাগরের বুকে ওই দুই শ্রমিকের মুখ ভেসে উঠল। জাহাজের ক্যাপ্টেন ট্র্যাসি ওই ছবি তুলে রাখলেন। একটা দুটো নয়, ছয়টা ছবি তুলে রেখেছিলেন। তারপর ক্যামেরাটা জাহাজের একটা নিরাপদ জায়গায় তালা মেরে রেখে দিলেন। ওই ফটোগ্রাফ থেকেই জানা গিয়েছিল দুই শ্রমিকের নাম। তারা হলেন জেমস কার্টনি এবং মাইকেল মিহান। জাহাজ কোম্পানিও কিন’ ভড়কে গিয়েছিল এমন ফটোগ্রাফ দেখে। তারা কোনোভাবেই ভেবে পেল না দুজন মৃত মানুষ কেমন করে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে জাহাজের সাথে সাথে আসে।

পরবর্তী যাত্রায় জাহাজের পুরো নাবিকদের বদলে ফেলা হলো। তারপর থেকে আর তাদের দেখা যায়নি। তাহলে কি জাহাজের আগের নাবিকরা ভুল কিছু দেখেছিলেন? যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তাহলে জাহাজের ক্যাপ্টেন তাদের ছবি তুলেছিলেন কীভাবে? এর কিন্তু কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। কেবল একটি উত্তরই হতে পারে, মৃত দুই শ্রমিকের ভূতই বার বার ফিরে এসেছিল জাহাজের কাছে। তাদের কি কোনো আকুতি ছিল? হতে পারে। কারণ ভূত বিশেষজ্ঞরা এমনই মনে করে থাকেন। অতৃপ্ত কোনো আত্মাই নাকি বার বার ফিরে আসে। এবং এই আত্মাকেই আমরা জানি ভূত বলে।
ভূত কী?
ভূত মানে সোজা কথায় কোনো মৃত আত্মা বা অপচ্ছায়া। ভূতে বিশ্বাস সেই প্রাচীন কাল থেকেই। পৃথিবীর প্রাচীন লোককাহিনীতে ভূতের কথা উল্লেখ আছে। এবং পৃথিবীর অনেক জাতিই ভূতে বিশ্বাস করে। তাদের মতে প্রাণীর শরীর থেকে আত্মা চলে গেলেই সে প্রাণহীন হয়ে যায়। কোনো কোনো আত্মা প্রাণীর শরীর থেকে বের হওয়ার পরও ফিরে আসে। আর এই ফিরে আসা আত্মাই হচ্ছে ভূত। কোনো শরীরী রূপ তার থাকে না। সে থাকে অস্পষ্ট। কিন্তু তার চালচলন স্বাভাবিক জীবিত শরীরের মতো। তাকে স্পষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু উপলব্ধি করা যায়। কিন্তু কেন সে ফিরে আসে?

ভূতেরা কেন আসে?
প্রাণীর শরীরে থাকার সময় যদি আত্মার কোনো অতৃপ্তি থাকে, তাহলেই নাকি আত্মা ফিরে আসে। তার অতৃপ্তি নানা কারণে থাকতে পারে। তাকে হয়ত ঠিত মতো কবর দেয়া হয়নি। কিংবা সে এই পৃথিবীর রূপ-সৌন্দর্য থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে না। তাই ফিরে আসে চেনা পরিচিত জগতে। অচেনা কোথাও সে যায় না। উনিশ শতকের বিখ্যাত নৃবিজ্ঞানী জেমস ফ্রেজার বিষয়টার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে- যে কোনো প্রাণীর শরীরের ভিতর থাকে আরেকটি ছোট প্রাণী। মানুষের শরীরের ভিতর থাকে আরেকটি ছোট মানুষ। এই ছোট মানুষ আর ছোট প্রাণীটাই চালিত করে বড় মানুষ বা প্রাণীকে। এটাই হচ্ছে আত্মা। মানুষ বা প্রাণী ঘুমায়, ওই আত্মা কিন্তু কখনো ঘুমায় না। কেবল সাময়িকভাবে মানুষ বা প্রাণীর শরীর ছেড়ে সে বাইরে বেরিয়ে আসে। কিংবা মানুষ বা প্রাণী যখন মারা যায়, ওই আত্মা কখনো মারা যায় না। কেবল স্থায়ীভাবে সেই প্রাণী বা মানুষের শরীর ছেড়ে বেরিয়ে আসে।

এই বেরিয়ে আসা ছোট প্রাণী বা ছোট মানুষটাই যখন আবার শরীরি রূপ ফিরে পেতে চায়, তখন তো সে কোনো অবলম্বন পায় না। মানে তাকে তো কোনো না কোনো বড় প্রাণীর শরীরে ভর করেই আসতে হবে। কিন্তু সেটা সে পাবে কোথায়? কাজেই তার সামনে একটাই পথ খোলা থাকে- অস্পষ্ট কোনো রূপ ধরা। আর এই অস্পষ্ট রূপটাকেই আমরা ভূত বলে জানি।

ভূত কি কেবল মানুষের আত্মাই হয়?
না। যে কোনো প্রাণীর আত্মাই ভূত হতে পারে। এমনকি কোনো জড়বস’ও ভূত হতে পারে। কুকুর, বিড়াল, নেকড়ের পাশাপাশি কোনো পাথরও নাকি ভূত হতে পারে। এমনকি গাছপালাও ভূত হতে পারে। সোজা কথা আমরা আমাদের চোখে যা দেখি, প্রকৃতির সবকিছুই ভূত হওয়ার যোগ্যতা রাখে।

ভূতরা কি খারাপ?
বেশিরভাগ ভূতের গল্পেই ভূতকে দেখানো হয়েছে খারাপ কোনো জিনিস হিসেবে। সে যেনো মানুষের কোনো কল্যান করতে পারে না। তবে ভূতরা কিন্তু ডাইনী বা দানবের চেয়ে খারাপ নয়। ভূতদের খারাপ হিসেবেও দেখা হয় না সব জায়গায়। ওরা কেবল আসে, কেউ কেউ দেখা দেয় তারপর চলে যায়।
যুগে যুগে ভূত
পৃথিবীর প্রত্যেক সাহিত্যেই ভূতের উপদ্রব আছে। খৃস্টপূর্ব ৪৭০ থেকে ৩৯১ পর্যন্তু একজন বিখ্যাত চীনা দার্শনিক ছিলেন। তার নাম মো ঝু। মো ঝু’র লেখাতেও ভূতের সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি নাকি ভূত দেখেছেন। রাজা সুয়ান ছিলেন চীনের রাজা। রাজা জীবনকাল ছিল খৃস্টপূর্ব ৮২৭ থেকে ৭৮৩ সাল পর্যন্তু। রাজা তার এক মন্ত্রী তু পোকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিলেন। মন্ত্রী তু পোয়ের অতৃপ্ত আত্মা মানে ভূত রাজা সুয়ানকে তীরবিদ্ধ করে হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছিল। ভূতুড়ে এই দৃশ্যটাই দেখেছিলেন দার্শনিক মো ঝু।

কেবল চীন নয়, ভূতের দেখা পাওয়া গিয়েছিল প্রাচীন এথেন্সেও। সেটাও খৃস্টপূর্ব ৬৩ থেকে খৃস্ট পরবর্তী ১১৩ সালের মধ্যকার ঘটনা। এথেনডোরেস নামে একজন স্টয়িক দার্শনিক একটি বাড়ি ভাড়া করেছিলেন এথেন্সে। সেই বাড়িতে ওঠার পর প্রায়ই তিনি গোঙানির শব্দ পেতেন। কখনো কারো পায়ের শব্দও নাকি পাওয়া যেত। এমনকি কখনো কখনো তার অস্পষ্ট অবয়বও দেখেছিলেন। এথেনডোরেস একদিন সেই ভূতের পিছন পিছন চললেন। এবং তিনি দেখলেন একটা জায়গায় এসে ভূতটা উধাও হয়ে গিয়েছে। পরদিন লোকজন দিয়ে সেই জায়গাটা খনন করালেন। এবং সেখান থেকে একজন মানুষের কঙ্কাল বেরুল। তিন বছর আগে লোকটি মারা গিয়েছিল। ওই কঙ্কালটাকে কবর দেয়ার পর আর সেই ভূত দেখা যায়নি।

প্রাচ্যের অনেক ধর্মে ভূতের কথা উল্লেখ আছে। যেমন হিন্দুদের পবিত্রগ্রন্থ বেদ-এ ভূতের কথা উল্লেখ আছে। হিব্রু তাওরাত ও বাইবেলেও ভূতের উল্লেখ আছে। যীশুখৃস্ট যখন পানির উপর দিয়ে হেঁটে আসছিলেন তখন তার অনুসারিরা তো তাকে প্রথমে ভূতই ভেবেছিল।

উনিস শতকে ‘ক্রিসমাস ক্যারল’ বইতে লেখক চার্লস ডিকেন্স ভূত এনেছিলেন। ভূতদের নিয়ে নানান লৌকিক কাহিনী ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত। ভূত এসেছে শেক্সপিয়রের বিখ্যাত নাটক ‘হ্যামলেট’-এ। হ্যামলেট তখন ডেনমার্কের রাজকুমার। রাজা ক্লডিয়াসকে তার চাচা গোপনে খুন করে ডেনমার্কের রাজা হওয়ার লোভে। কিন্তু রাজার অতৃপ্ত আত্মা বারবার ফিরে আসে। হ্যামলেটকে দেখা দিয়ে যায়। হ্যামলেটও কৌশলে দেশবাসীকে সেটা জানিয়ে দেন।

অস্কার ওয়াইল্ডের লেখা গল্পে আছে দৈত্যের কথা। প্রথমে দৈত্যটা অহঙ্কারী থাকে। শিশুদের সে তার বাগানে ঢুকতে দিতে চায় না। পরে শিশুদের বন্ধু হয়ে যায়। আর ভূত নিয়ে পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন ভাষায় হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্র। এসব চলচ্চিত্রের কোনোটা ভয়ানক, কোনোটা হাসির, কোনোটা দুঃখের। ভূতদের কাল্পনিক জীবন নিয়ে তৈরি এসব চলচ্চিত্র দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছে। তবে ভূতপ্রিয়তা পেয়েছে কি না কে জানে? শিশুদের জন্য তৈরি কার্টুন সিরিজ ‘স্কুবি ডু’, ‘ড্যানি ফ্যান্টম’, ‘ঘোস্ট ট্র্যাকার্স’, ‘ট্রুথ অর স্কেয়ার’, ‘মিস্ট্রি হান্টার্স’-এর কাহিনী গড়ে উঠেছে ভূতকে কেন্দ্র করে। হালের কার্টুন সিরিজ ‘বেন টেন’-ও ভূতকে ঘিরেই। দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পাওয়া গ্রন্থ ও চলচ্চিত্র হ্যারিপটারের কাহিনীও ভূত বিষয়ক।
ভূতে বিশ্বাস
তুমি কি ভূত বিশ্বাস করো? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে পৃথিবীর অনেক মানুষকে অনেকবার। পৃথিবীর অনেক দেশেই জরিপ করা হয়েছে সে দেশের মানুষ বা শিশুরা ভূতে বিশ্বাস করে কী না? এবং দেখা গেছে উন্নত দেশের মানুষ ও শিশুদের আজগুবি সব বিষয়ে বিশ্বাস তুলনামূলকভাবে অনুন্নত দেশের মানুষের চেয়ে বেশি। এবং শিক্ষিত মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস অশিক্ষিত মানুষের চেয়েও বেশি। সে হিসাব করতে গেলে শিক্ষিত ও উন্নত দেশের বেশিরভাগ মানুষ ও শিশু ভূত বা এধরনের অলৌকিক প্রাণী বিশ্বাস করে।

২০০৫ সালে আমেরিকার গ্যালপ অর্গানাইজেশন আমেরিকানদের উপর একটা জরিপ চালায়। জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৩২ ভাগ আমেরিকান ভূতে বিশ্বাস করে। ছোটরা তো করেই, বড়রাও ভূতে বিশ্বাস করে বসে আছে।

ভূতের অস্তিত্ব
পশ্চিমা দেশের অনেকের বিশ্বাস ভূত আছে। আর আছে বলেই ভূতের অস্তিত্ব সম্পর্কে তারা কিছু ধারণাও দিয়েছে। তাদের অনেক ভূত গবেষক গবেষণা করে বেরও করেছেন কোথায় কোথায় ভূতের অস্তিত্ব থাকতে পারে। এবং কীভাবে বোঝা যাবে ভূতের অস্তিত্ব। তেমনি কিছু এখানে জানানো হল-

১. ঠাণ্ডা জায়গা। আশপাশের জায়গা থেকে যদি কোনো জায়গা ঠাণ্ডা হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এখানে ভূত আছে বা খানিক আগে ছিল। ভূতদের শক্তির প্রয়োজন। তারা কোনো গরম জায়গায় এসে সে জায়গা থেকে শক্তি আহরন করে নিয়ে যায়। ফলে সে জায়গা ঠাণ্ডা হয়ে থাকে।

২. বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের অদ্ভুত আচরন। ভূতদের উপস্থিতিতে বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র নানান রকম অদ্ভুত আচরন করে। যেমন বাতি জ্বলে-নেভে, রেডিও অন অফ হয়, টিভি ঝির ঝির করে।

৩. কোনো কিছুর অকারণ নড়চড়া। এমনকি কোনো জড়বস্তুও অকারণে নড়া চড়া শুরু করে দেয়। যেমন দরজা জানালা খোলে আবার বন্ধ হয়।

৪. চোখের সামনে থেকে কোনো কিছু হারিয়ে যায় বা নড়া চড়া শুরু করে দেয়।

৫. পানি ক্রমাগত উপরে উঠে আবার নিচে নামে।

৬. শীতল কোনো কিছুর স্পর্শ অনুভব করা।

৭. নানান ধরনের ভৌতিক শব্দ শোনা। যেমন কারো হাঁটার শব্দ, গান, কথা বলার শব্দ, ফিসফিসানি, খটখট শব্দ, বিকট শব্দ, কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ, টেলিফোন রিং।

৮. কোনো জায়গায় হঠাৎ কোনো আলোর ঝলকানি।

৯. কোনো ছায়া বা কোনো কিছু নড়াচড়া করছে দেখতে পাওয়া

১০. কোনো প্রাণীর অদ্ভুত আচরন করা। কারণ ভূতদের অস্তিত্ব প্রাণীরাই প্রথমে টের পায়।

১১. হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই কোনো অদ্ভুত বা পরিচিত গন্ধ পাওয়া ১২. হঠাৎ কোনো কুয়াশা বা অপচ্ছায়া উদয় হওয়া

১৩. হঠাৎ কোনো কিছু ভাসতে থাকা।
ভূত দেখতে কেমন
যারা ভূতে বিশ্বাস করে ও ভূত গবেষণা করে, ভূতেরা দেখতে কেমন সেটারও একটা বর্ণনা তারা দিয়েছেন। ভূত গোলাকার হতে পারে। আলোর মতো এই গোলাকার ভূতের আলো অনেক দূর যেতে পারে আবার খুব দ্রুত নড়তেও পারে। অনেকেই বিশ্বাস করে এটাই হচ্ছে ভূত বা কোনো অতৃপ্ত আত্মার উপস্থিতি বোঝার প্রথম পর্যায়। ভূতের আকার হতে পারে কুয়াশা, বাষ্প বা পানির মতো। এবং এই আকার তৈরি হয় ধোঁয়া বা কুয়াশা থেকে। মানুষের ছায়ার মতো হতে পারে ভূত। দেখা গেল কোনো মানুষ নেই কিন্তু একটা ছায়া ঘোরাঘুরি করছে। তাহলে নিশ্চিত হতে হবে ওটা ভূত। ভূত আবার একটি অদ্ভুত চেহারার আর অদ্ভুত শরীরের মানুষের আকৃতিও নিতে পারে। তবে এরকম ভূত দেখা যায় না বললেই চলে। দেখা গেলেও খুবই কম।

ভূত নিজেকে যে কোনো জায়গায় প্রকাশ করতে পারে। যত উজ্জল আলো হোক কিংবা যত ঘন অন্ধকারই হোক, আবার কোনো নির্জন জায়গা হোক বা হাজার হাজার মানুষের সামনেও সে নিজেকে হাজির করতে পারে। একটা কথা প্রচলিত আছে, অনেক মানুষের মাঝে এসে নাকি ভূতেরা শক্তি সঞ্চয় করে নেয়। রাতে বা দিনে যে কোনো সময়ই তারা চলাফেরা করতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করে যখন খুব কম মানুষ জেগে থাকে, তখনই নাকি ভূতদের উদয় হওয়ার মোক্ষম সময়। সে হিসাবে রাতই হচ্ছে ভূতদের বের হওয়ার আসল সময়। আবার কিছু ভূত বিশেষজ্ঞ মনে করেন বুদ্ধিমান ভূতেরা নির্জন এলাকার চেয়ে জনাকীর্ণ এলাকাই পছন্দ করে বেশি। এতে তাদের ধরা পড়ার সম্ভবনা কম।

ভূত যদি এসেই পড়ে
ভূত যদি এসেই পড়ে তাহলে কী করতে হবে? বেশিরভাগ ভূতই হচ্ছে অতৃপ্ত আত্মা। অপূর্ণ কোনো চাহিদার জন্যই তারা ভূত হয়ে ফিরে আসে বারবার। আবার কোনো কোনো ভূত পথ হারিয়ে চলে আসে। কোথায় যেতে হবে বুঝতে পারে না। এমন ভূত হলে ভয়ের কিছু নেই। ভূতের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে তুমি তার শত্রু নও। তাকে সাহায্য করতে চাও। এবং একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, মানুষ যতই ভূতে ভয় পাক বা না পাক, ভূত কিন্তু মানুষকে ঠিকই ভয় পায়। ভূতের সাথে দেখা হয়ে গেলে প্রথমেই তার ভয় ভাঙাতে হবে। নিজে তো ভয় পাওয়া চলবেই না। ভূতের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। যেহেতু তারা অস্পষ্ট স্বরে কথা বলে, তাই মনোযোগ দিয়ে না শুনলে তাদের কথা বোঝা যাবে না। কোনো মৃত মানুষকে আবার ঠিক মতো সৎকার করা না হলে তার আত্মা ভূত হয়ে আসে। ঠিক মতো মৃতের সৎকার করলে আত্মার অতৃপ্তি থাকে না।
বাংলার ভূত
বাংলার ভূতরা নানান নামে পরিচিত। ভূতদের জাতিভেদও আছে। মানে পুরুষ ভূত তো আছেই, স্ত্রী ভূতও আছে। স্ত্রী ভূতকে পেত্নী হিসেবেই ডাকা হয়। যদিও কথাটি প্রেত-এর স্ত্রীলিঙ্গ প্রেতিনী জাত। এর লৌকিক উচ্চারণ পেত্নী। আছে ডাকিনী-নাগিনী। ডাকিনীরা শিব-দুর্গার অনুচরী। পেত্নীর পরেই দাপুটে স্ত্রীভূত হচ্ছে শাকচুন্নি। এদের আরেক নাম শাখিনী। পুরুষভূতদের মধ্যে সবার প্রথমেই আছে ব্রহ্মদৈত্য। এরা সাধারনত খড়মপায়ে ঘুরে বেড়ায়। মধ্যরাতে খড়মপায়ে কাউকে হাঁটতে শুনলেই বোঝা যাবে এরাই ব্রহ্মদৈত্য। এদের বসতি সাধারনত বেলগাছে।

আর দানো হিসেবে যাদের পরিচিতি এরা ঠিক ভূত নয়, তবে ভূত গোত্রীয়। দানোরাই হচ্ছে দানব বা দৈত্য। আরবি সাহিত্যের জিনই হচ্ছে দানো। একানড়ে নামে যে ভূত, তার পা আবার একটা। এক পায়েই সে সকল কাজকর্ম করে। মানে ভূত সমাজে প্রতিবন্ধী ভূত। আরেকজাতের প্রতিবন্ধী ভূত আছে। এদের নাম কন্ধকাটা ভূত। এরা কবন্ধ নামেও পরিচিত। এদের মাথা নেই। আছে কেবল ধড়। গলাকাটা এই ভূতের মাথা সে নিজের হাতে নিয়ে ঘোরে। কাটা মুণ্ডটি কথাও বলতে পারে। এবং খামোখাই বক বক করে।

আছে পেঁচো ভূত। পেঁচোরা টার্গেট করে শিশুদের। মানে ওরা শিশুদের ভয় দেখিয়েই তবে মজা পায়। আছে যক্ষভূত। যক্ষভূত হল পাহারাদার ভূত। আগের দিনের ধনী কৃপণরা তাদের ধনসম্পত্তি নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল। মাটির নিচে ঘর বানিয়ে সেই ঘরে তাদের ধন-রত্ন লুকিয়ে রাখত। তবু তাদের ভয় হতো, যদি কেউ চুরি বা ডাকাতি করে সেই ধন নিয়ে যায়? এই ধন-রত্ন পাহারা দেয়ার জন্য কোনো এক বালককে ধরে এনে পুজো করে সেই ঘরে বন্দি করে রাখত। একসময় সেই ঘরে বন্দি থেকে না খেয়ে মারা যেত সেই বালক। মরে গিয়ে সে হতো যক্ষভূত। যক্ষভূতের কাজই হচ্ছে অপরের ধন রক্ষা করা। উপযুক্ত উত্তরাধিকে সেই ধন ফেরৎ দিতে পারলেই তার মুক্তি ঘটত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সম্পত্তি-সমর্পণ’ এমনই একটি গল্প।
বাংলাসাহিত্যে কিন্তু পুকুরেও ভূত থাকে। পুকুরের ভূতের নাম হাঁড়া-ভূত। মানুষ পুকুরে সাঁতার কাটতে নামলে এরা মাঝে মাঝে পা ধরে টেনে নিয়ে ডুবিয়ে মারে। তারপর রক্তপান করে। কালবৈশাখির ঝড়ে গোল হয়ে যে ঝড় ঘোরে-তার নাম বাঁড়ুল ভূত। এই ভূত দেখা দিলে নাকি মাঝউঠানে একটা পিঁড়ি উল্টো করে বলতে হয়- বাঁড়ুল বাঁড়ুল-মাছ পোড়া দিয়ে ভাত খেয়েছি-ছুঁয়ো না।

বাঁশ-ঝাড়ে থাকে ঝেরুভূত। ঝেরুভূতের কারণেই নাকি বাঁশঝাড়ের বাঁশেরা এমন শুয়ে থাকে। রাতে ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে নিয়ে যায় যে ভূত, তার নাম দিশাভূত নিশাভূত। এই ভূতেরা আবার হাঁড়াভূতের মতো অতোটা ভয়ঙ্কর নয়। এরা কারো রক্ত পান করে না। কাউকে মারেও না। কেবল সারারাত ঘুরিয়ে মারে। আর খুব ভয়ঙ্কর হলে ঘাড় মটতে দেয়। তবে একবারের বেশি এরা ডাকে না।

মানুষভূতের পাশাপাশি ঘোড়াভূত, গোভূতও আছে বাংলা সাহিত্যে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি ঘোড়াভূত দেখেছিলেন। এছাড়া আছে বাস্তুভূত। এরাও মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।
আমাদের ভূতেরা কোথায় থাকে?
আমাদের ভূতেরা কোন জায়গায় থাকে না? পানি, মাটি, বাতাস-সবজায়গাতেই এদের অবাধ বিচরণ। ব্রহ্মদত্যির পছন্দ বেলগাছ, শিমুলগাছ। শাকচুন্নির প্রিয় জায়গা হচ্ছে ঘন শ্যাওড়া ঝোপ। শ্যাওড়া ঝোপ অবশ্য অন্যভূতদেরও প্রিয় আবাসস্থান। একানড়ে ভূতদের থাকার জায়গা হচ্ছে নির্জন বিস্তীর্ণ প্রান্তরের তালগাছ। আর ভূতুড়ে বাড়ি পেলে কোনো ভূতই সেখানে থাকতে আপত্তি করে না। পুকুর প্রিয় হচ্ছে হাঁড়াভূতদের। এবং এরা শুধু পুকুরেই থাকে।

আমাদের ভূতরা কী খায়?
ভূতদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার হচ্ছে মাছ। তবে পোড়া মাছ। ভাতের হাঁড়ি ভেঙে রান্না মাছও খায় কোনো কোনো ভূত। মেছোভূতরা তো মাছ ছাড়া আর কিছুই খায় না। হাঁড়াভূতরা রক্তপান করে। আসলে একসময় আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি আমরা ছিলাম বলেই, আমাদের ভূতদের প্রধান খাবারও হচ্ছে মাছ। মাছের যে কোনো পদই তারা পছন্দ করে। ইলিশ মাছ ভূতদের বেশি পছন্দ।

আমাদের ভূতেরা দেখতে কেমন?
আমাদের ভূতেরা নানান ধরনের। কেউ দুটো তালগাছের সমান লম্বা। কারো কারো হাতপা এত লম্বা যে, যত দূরেই থাকুক যে কোনো কিছু এরা ধরতে পারে। এবং যে কোনো জায়গায় এরা নিমেষে যেতে পারে। আবার ইচ্ছে মতো হাত বা পা লম্বাও করতে পারে। কারো কারো শরীর আবার কেবল হাড় দিয়েই গড়া। এদের চোখদুটো কোটরে ঢোকানো। তবে দাঁত বত্রিশটিই বর্তমান। কারো কারো আবার ফোকলা দাঁতও আছে। ফোকলা দাঁতে শিরশিরিয়ে হাসে। বেশিরভাগ ভূতেরই গায়ের রঙ কালো। মেয়ে ভূতদের নাক সবসময়ই থ্যাবড়ানো। কারো কারো আবার একটা পা। কারো আবার পায়ের পাতা থাকে পিছনের দিকে। কোনো কোনো ভূতের লেজও থাকে।
আমাদের ভূতরা কি নেংটো থাকে?
না। আমাদের ভূতরা নেংটো থাকে না। কেউ কেউ মসলিন জাতীয় কাপড় পরে। তবে বেশিরভাগই সাদা থান কাপড় পরে থাকে। আর শাকচুন্নিরা পরে লালপেড়ে সাদা শাড়ি। কোনো কোনো ভূত গামছাও পরে। কিছু কিছু ভূত আবার ছায়াময়। তাদের পরণে যে কী থাকে বলা যায় না।

আমাদের বাংলাসাহিত্যে ভূতের রমরমা কারবার। বিচিত্র নামে, বিচিত্ররকমে এরা আমাদের সামনে আসে। বাংলা সাহিত্যে ভূত নিয়ে কে লিখেননি? প্রায় সকল সাহিত্যিকই ভূতের গল্প লিখেছেন। তবে বাংলাসাহিত্যে ভূতগল্প লেখকদের মধ্যে সেরা হচ্ছেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৮৯৩ সালে তিনি লিখলেন স্কল স্কেলিটন এন্ড কোং। ত্রৈলোক্যনাথ ভূতদের জন্মরহস্যও উদঘাটন করেছেন। তিনি লিখেছেন- যেমন জল জমিয়া বরফ হয়, অন্ধকার জমিয়া তেমন ভূত হয়।
সত্যিই কি তাই? হয়ত। নয় তো আমরা অনেকেই ভূত বিশ্বাস করি না ঠিকই, কিন্তু অন্ধকারে ভূতের ভয় পাই কেন? আমাদের চিন্তা ও চেতনার অগোচরেই অন্ধকারে ভূত থাকে বলে আমরা মনে করি। এই মনে করি দেখেই আমরা ভূতে ভয় পাই।

আসল কথা

কথায় আছে- আহার নিদ্রা ভয়, যত করবে তত হয়। ভয় না পেলেই হয়। যতই ভয় পাবো, ততই আরো ভয় আমাদের জড়িয়ে ধরবে। আর ভয় না পেলেই কোনো ভয়ই আমাদের ভয় পাওয়াতে পারবে না। ভূতের ভয় তো তখন তুচ্ছ, যেখানে ভূত বলতে কিছু আছে এমন প্রমাণ কেউ কোনোদিন দিতে পারেননি। দিতে পারবেন বলেও মনে হয় না। যদি সত্যিই ভূত বলে কিছু থাকতো, তাহলে এতদিনেই আমরা সে ভূত আবিস্কার করে ফেলতে পারতাম। মঙ্গলে পানির সন্ধানে মানুষের তৈরি নভোযান যাচ্ছে, আর আমাদের ক্ষুদ্র এই পৃথিবীতে আমরা এখনও ভূতের সন্ধান করতে পারিনি- এটা কি বিশ্বাস যোগ্য?

সূত্রঃ ও বিভিন্ন তথ্য: ইন্টারনেট থেকে সগ্রহ করা।

লেখক:ahsanultonmoy

জানাযা

রমিজ মিয়া লাশটাকে দেখে যত ভয়
পেলো তা মনে হয়
সারাজীবনে সে কোনদিন পায় নাই।
এইটাই তার পেশা,কবর খুঁড়ে লাশ
নামানো।বেশিরভাগ বেওয়ারিশ লাশ
এইখানে কবর দেওয়া হয়।
রমিজ মিয়ার এইসব লাশ
কবরে রাখতে খুব মায়া হয়।
লোকটা পৃথিবীতে এতদিন কত আমোদেই
কাটাইলো আর এহন মারা যাওনের পর
তার লাশডাও কেউ খুজতে আইলো না।
এই লোকের ভাগ্যে হয়ত এইটাই
লেখা ছিলো।এসবই ভাবে রমিজ
মিয়া লাশগুলারে মাটি দেয়ার সময়।
কিন্তু এই লাশটার ক্ষেত্রে তার এমন
কোন অনূভুতি কাজ করলো না।বরং ভয়
পেয়েছে সে।লোকটার মুখ দেখে বয়স
আন্দাজ করেছে রমিজ মিয়া,প্রায় ৫০
হবে।কিন্তু চেহারায় রাগি রাগি ভাব।
বেশিক্ষন লাশটার
দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে নাই সে।এত
বীভৎস!!
লোকটার এমন কি অপরাধ
ছিলো যে কে বা কারা তাকে এভাবে মেরেছে।
প্রথমে মাথা শরীর
থেকে আলাদা করেছে,তারপর সারা শরীর
চাপাতি বা এই জাতীয় কিছু
দিয়ে কুপিয়ে গায়ে এসিড ঢেলে দিয়েছে।
ওহ কি নৃশংস!!এই লাশটার কোন পরিচয়
পাওয়া যায় নাই।এমনকি ৪-৫দিন শহর
থেকে কেউ হারিয়ে গেছে এমনটাও
শোনা যায় নাই।তাই হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষকে থানা থেকে নোটিশ
পাঠানো হয়েছে পোস্ট মর্টম করে লাশ
কবর দিয়ে দিতে।
কিন্তু মফস্বলের
সরকারী হাসপাতালগুলোতে যা হয়,তাই
হয়েছে এই লাশটার ক্ষেত্রেও।অর্থাৎ
পোস্ট মর্টম
করে কোনমতে দায়সারা সেলাই দিয়ে লাশ
পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে কবরস্থানে।
সরকারি হাসপাতাল
থেকে পাঠানো বেওয়ারিশ
লাশগুলোকে দাফন করা হয়
যে কবরস্থানে তার পাহারাদার রমিজ
মিয়া।
আজ যখন এ্যাম্বুলেন্স এসে এই
লাশটা কবরস্থানে রেখে গেলো তখন
রমিজ
মিয়া বুঝে গেলো আরো একটা বেওয়ারিশ
লাশ তাকে যত্ন নিয়ে কবর দিতে হবে।
কিন্তু লাশটিকে দেখার পর তার সেই
পুরোনো মায়া দরদ কাজ করলো না।
এমনিতেও প্রায় সন্ধা হয়ে এলো,তাই
তাড়াতাড়ি ঝন্টুকে ডাক দিয়ে কবর
খুড়তে লেগে গেলো সে।আর বারবার তার
চোখে ভাসতে লাগলো দেহ
থেকে বিচ্ছিন্ন মাথাটার কথা।
সরকারী হাসপাতাল গুলো এত
গাফেলতি করে যে বেওয়ারিশ
বলে লাশটার মাথা সেলাই
করে লাগিয়ে দেয় নাই।তার ওপর
হাসপাতালের মর্গে ৪-৫দিন
পরে ছিলো।কি যে দূর্গন্ধ বের
হচ্ছিলো।।
রমিজ মিয়া আর ঝন্টু মিলে যখন
লাশটা কবর দেয়া শেস করলো তখন
মাগরিবের আজান পড়ে গেছে।রমিজ
মিয়া গোছল করতে গেলো আর কাজ শেস
বলে ঝন্টুও চলে গেলো।
ঝন্টু ১০-১২ বছরের
একটা ছেলে রমিজ
মিয়াকে কাজে সাহায্য
করে,সন্ধা পর্যন্ত থাকে তারপর
চলে যায়।আর তখন
কবরস্থানে থাকে শুধু রমিজ মিয়া একা।
কবরস্থানে যে জায়গাটায় মুর্দার
জানাযা পড়ানো হয়,তার সামনে গেট
থেকে বের হয়েই পাশে খুপরি মত
একচালা ঘরে রমিজ মিয়া থাকে।নাম
মাত্র গেট
থেকে বাইরে,বলতে গেলে কবরস্থানের
ভিতরেই থাকে সে।মফস্বলের
কবরস্থান বলে কথা,তার উপর আবার
বেওয়ারিশ লাশের,তাই
বলতে গেলে শহরের এক
কোণায়,জনবসতি থেকে একটু দূরের
জায়গাটাই বেছে নেওয়া হয়েছে।
একজনের রান্না,তাই প্রতিদিন এশার
নামাজ
পড়ে রাণ্ণা করে খেয়ে শুয়ে পড়ে রমিজ
মিয়া।
মাঝে মাঝে বাইরে এসে কবরস্থানের
দিকে তাকায় একবার।
তারমতে কবরস্থানে পাহারা দেয়ার কিছু
নাই।বড় বড় শহরে তো নাকি লাশ
চুরি হয় কিন্তু এই শহরে এমন কিছু
ঘটেছে বলে শোনে নাই সে।
তবুও তার চাকরী যখন এইটাই তাই
ঘুমানোর আগে আজও নিয়মমাফিক
খাওয়া দাওয়া সেরে একটা বিড়ি ধরিয়ে এসে তাকায়
কবরগুলার দিকে।স্বভাবমতই চোখ যায়
নতুন দেয়া কবরটার দিকে।চোখের ভুল
নয় তার স্পষ্ট মনে হলো কবরটার
মাথা’র দিকে কি যেন আছে!!
কাছে গিয়ে দেখলো মাটি খোড়া!!
কি ব্যাপার!!
মাত্র ৩-৪ ঘন্টা আগেই তো সে আর
ঝন্টু মিলে পরিপাটি করে কবর দিলো।
একটু
তাড়াহুরা সে করেছিলো অন্যদিনের
তুলনায় কিন্তু এভাবে রেখে যায় নাই।
স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেউ মাটি খোড়ার
চেষ্টা করেছে এবং কতটুকু খুড়েও
ফেলেছে।
পরমূহুর্তে সে ভাবলো হয়ত গেট
দিয়ে ঢুকে কোন কুকুর এই কাজ করেছে।
তাই সে হাত দিয়ে মাটি জায়গামত
চাপা দিয়ে দিলো,কিন্তু
এইটা সে একবারও
চিন্তা করলো না যে সে নিজহাতে প্রতিদিন
গেট লাগিয়ে তালা লাগায় দেয়।তারপর
কোন কুকুর কেন,মানুষের পক্ষেও
কবরস্থানে ঢোকা সম্ভব নয়!!
ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে নিশ্চিত
মনে ঘুমিয়ে পড়লো সে।প্রচন্ড
অস্বস্তিতে ঘুম ভেংগে গেলো তার
রাতে।তার এমন হয় না কখনো,একঘুমেই
রাত শেস হয়ে যায়।তার
কাছে ঘড়ি না থাকায় বুঝলো না রাত
ঠিক কয়টা বাজে।ঘুম ভাংলে তার
এধরনের অনূভুতি হয় না কখনো,কিন্ত
আজ তার কেন
জানি দরজা খুলে বাইরে যেতে ইচ্ছা হলো।
দরজা খুলে বাইরে যাবার পর তার
নাকে পচাঁ কটু গন্ধ এসে লাগলো।গন্ধের
উৎস খুজতে আশে-পাশে তাকালো সে।
পরিষ্কার চাদেঁর আলোয় দেখলো মূর্দার
জানাযা পড়ানো হয় যে জায়গায়
সেখানে সাদা কাপড়ে মোড়া কিছু
একটা রয়েছে সম্ভবত একটা লাশ!!
রমিজ মিয়া ভীতু কখনোই নয় তাই ভয়
সে একটুও
পেলো না বরং কাছে এগিয়ে গেলো ভালো করে দেখার
জন্য।ঠিক মূর্দার
খাটিয়া যেখানে রেখে জানাযা পড়ানো হয়
সেখানে একটা লাশ পড়ে আছে।
এতরাতে কারা লাশ
নিয়ে আসলো ভাবতে শুরু করলো রমিজ
মিয়া।যদি কেউ
এনে থাকে তাহোলে তাকে ডেকে তুললো না কেন।
আবার ভাবলো ভিতরে ঢুকতে হলে গেট
দিয়েই ঢুকতে হবে যার চাবি একমাত্র
রমিজ মিয়ার কাছেই আছে!!
এবার চারিদিক থেকে ভয়ের
অনূভুতি গ্রাস করলো তাকে।হাটার
শক্তিও মনে হলো কেউ কমিয়ে দিয়েছে।
তবুও বিকারগ্রস্থের মত
সে এগিয়ে গেলো লাশটার দিকে।কাপড়
খুলে যা দেখলো তাতে তার
মনে হলো সে বুঝি এখনই অজ্ঞান
হয়ে পড়ে যাবে!!
সেই মুখটা,যা দেহ
থেকে আলাদা করা হয়েছে এখন তার
সামনে আবার।বিকালে কবর
দেয়া লাশটা এখানে কিভাবে আসবে??
এসিডে পোড়া পচা শরীর থেকে ভুরভুর
করে গন্ধ বের হচ্ছে।রমিজ মিয়ার
মাথায় এসব কিছুই ঢোকে না।
অতি শোকে পাথর হবার মত
সে অতি ভয়ে বিহবল এখন!! হঠাৎ তার
মনে হলো এখনই বুঝি প্রত্যেকটি লাশ
উঠে এসে এভাবে পড়ে থাকবে তার
সামনে।কিন্তু এমন কিছুই ঘটলো না।
রমিজ মিয়ার সামনে নিথর
পড়ে আছে লাশটি।
রমিজ মিয়ার
মনে হলো সে গায়ে শক্তি ফিরে পেলো হঠাৎ
বা ভয়ের ঝাপটা টা চলে গেলো তার
উপর দিয়ে।কিভাবে কেন লাশ কবর
থেকে উঠে আসলো এসব
চিন্তা না করে সে ভাবলো লাশটাকে আবার
কবর দিতে হবে।
এই ভাবা মাত্রই
সে লাশটাকে কাধে তুলে নিলো।
জীবনে মনে হয় এত ভারী লাশ
সে কোনদিন বহন করে নাই তাই
মনে হলো রমিজ মিয়ার।ভার
সামলাতে বেশ বেগ পেতে হলো তার।
৫-৬ দিনের পুরানো লাশ রমিজ
মিয়া জোরে ধরা মাত্রই
ধুমড়ে মুচড়ে গেলো।মনে হলো এখনই
বুঝি হাত বা পা খুলে পড়বে।রমিজ
মিয়ার মনে ছিলো না যে লাশটার
মাথা শরীর থেকে আলাদা,তাই
সে লাশটা ঘাড়ে নেওয়া মাত্রই
মাথাটা থপ করে পড়লো কাপড়ের ভিতর
থেকে।আর একহাতে মাথাটাও
তুলে নিলো রমিজ
মিয়া,চললো কবরে লাশটি রেখে আসতে।
লাশটি কবরে রেখে মাথাটা ঠিক জায়গায়
বসানো মাত্রই চোখ
কপালে উঠলো তার।বড় বড় হলুদ চোখ
দিয়ে লাশটা তাকিয়ে আছে তার
দিকে আর একটা হাত
দিয়ে ধরে রেখেছে রমিজ মিয়ার হাত
এবং এ্ত জোরে যে কারো সাধ্য নাই সেই
হাত ছাড়ানোর!!
রমিজ মিয়ার গায়ের সব লোম
খাড়া হয়ে গেলো এবং এতকিছু আর সহ্য
করতে না পেরে সে জ্ঞান হারালো।
যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন
সকাল,সে দেখলো ঝন্টু তার মুখের উপর
ঝুকে আছে।ঝন্টু জিগেস
করলো রাতে কি হয়েছিলো এবং কিভাবে নতুন
কবর দেয়া লাশটা মুর্দার
জানাযা পড়ানোর জায়গায় গেলো!!
এই কথা শুনে রমিজ মিয়ার
কানে তালা লাগার জোগাড় হলো।
সে নিজে কাল ২য় বারের মত লাশ
কবরে রেখে এসেছিলো শুধু
মাটি দিতে পারে নাই।কেন পারে নাই
তা আর কাউকে বললো না শুধু
বললো সে আর এখানে কাজ
করবে না এবং তখনই চলে গেল।
কবরস্থান কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপার
নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি না করে লাশটিকে আবার
কবর দিয়ে নতুন দারোয়ান নিয়োগের
সিদ্ধান্ত নিলো।সেদিন কার মত
কাউকে না পেয়ে কবরস্থান
কর্তৃপক্ষরাই
গেটে তালা লাগিয়ে চলে গেলো।
সেদিন শুক্লপক্ষের রাতে কেউ
যদি কবরস্থানে উকি দিতো তাহলে দেখতে পেতো,নতুন
কবর দেয়া লাশটি থেকে একটা হাত বের
হয়ে অতিকষ্টে হাতড়ে কবর
থেকে মাটি সরিয়ে নিজের
মাথাটা একহাতে ধরে উঠে দাড়ালো।
তারপর
ধীরে,অতি ধীরে এগিয়ে গেলো মুর্দার
জানাযা পড়ানোর জায়গায়,চুপচাপ
সেখানে শুয়ে পড়লো।
মুসলমানের ঘরে জন্ম
তার,জানাযা ছাড়া কবরে থাকতে চায়
না সে।বড় কষ্ট এতে,বড়ই কষ্ট….

লেখক:ahsanultonmoy

অপেক্ষা

সেবার পূর্নিমায় গ্রামের বাড়ি ছিলাম। প্রতিবারের মত
এবারো জ্যোৎস্না উৎসবের কথা ভাবছিলাম। হঠাৎ
ঠিক করলাম মাইল পাঁচেক দূরের দেড়শো বছর
পুরানো রহস্যময় হিন্দু রাজবাড়িতে যাব। ওখানে নাকি
পূর্নিমা উৎসব হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। শেষ
বিকালের দিকে রওনা হয়ে গেলাম। কিন্তু পথে
বাস ড্রাইভার বেশ গম্ভীর হয়ে গেল। আমাকে
এই সন্ধ্যায় অমন শ্মশানঘাটে যেতে মানা করল।
এমনিতে তো ঐ এলাকায় কেউ যায় না তার উপর
অপরিচিত! শুনে তো আমার আত্মারাম খাচাছাড়া! এ
যুগে আবার এ কেমনকথা ? ভাবলাম এই রাতে আর
ওদিকে যাবোই না। বাসথেকে নেমেই আবার
ফিরতি গাড়িতে ফিরে আসব। বাস থেকে নেমে
যখন রাজবাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালাম খুবই অবাক হলাম।
আসলেই ওখানে পূর্নিমা উৎসব চলছে। মেয়েরা
দলে দলে পড়েছে রঙ বেরঙের শাড়ি আর
খোপায় গাদা ফুলের মালা। সাজ সাজ রব দেখে
ভয় কবেই দৌড়ে পালিয়েছে বুঝতেই পারিনি।
আমিও নির্ভয়ে বসে পড়লামতাদের সাথে।
আসরের মধ্যমনি একটি যুবতী মেয়েসাদা শাড়ি
আর খোপায় শিউলিমালা পরেছে। কি অপূর্ব মিল!
দেখলেই কেমন একটা স্নিগ্ধতা জাগে।
মেয়েটি হারমোনিয়ামে কি সুন্দর গান তুলছে।
আহা! এমনই এক রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীকেই
তো আজীবন নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে
কল্পনা করে এসেছি! শুধু তাই নয়। সুরের মুর্ছনায়
কখন যে মধ্যরাত পেরিয়ে গেছেবুঝতেই
পারিনি। শেষের দিকে একজন প্রৌঢ়া সুরতুলছিল।
তখন সেই শিউলিমালার যুবতীটি আমার কাছাকাছি
এসে বসেছিল। আমারও খুব ইচ্ছা হল কথা বলার ।
আমার অভ্যাসমত শুরুটা করলাম খোচা দিয়েই “কি
ব্যাপার? এত মহাসজ্জার দিনে বিধবার সাদা শাড়ি!”
মেয়েটি মিষ্টি হেসে বললো, “বিধবাই তো!”
যদিও কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। তাও কথা
চালিয়ে নিলাম। নাম তার শুভ্রতা দেবী। (দেখতে
দেবীর মতই। আরপোষাকেও শুভ্রতারছোয়া।)
থাকেন এক অজানা গায়ে যেখানে মানবের
পদধূলি পড়ে না! (কথার কি ঢং!) অনেকটা সময় যাওয়ার
পর বুঝতে পারলাম তার প্রতিটি হেয়ালীর একটা
অর্থ আছে। তার গহীন মনে কোথাও ব্যথা
আছে। সে আনমনে তার কথাই বলে। আমার নামটা
পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে না। তাও তার প্রতি আগ্রহ
বাড়তে থাকল। আমি তার কাছে আরো গান শুনতে
চাইলাম সেও আমায় শোনাল আমার পছন্দের
গানগুলো। ‘ভালবাসি ভালবাসি’, ‘তুমি কোন কাননের
ফুল’, ‘আমার এই ঝরনা তলার নির্জনে’,‘এসেছিলে
তবু কেন আসোনি’, ‘আমারও পরান যাহা চায়’
আরো কত গান। কি আবেগ, কি মমতা দিয়েই না
গেয়েছিল। তার আবেগ আমাকেওছুয়ে
গিয়েছিল। গান শেষ হওয়ার পরও আমরা
অনেকক্ষন নিস্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম।
অবশেষে আমিই নীরবতা ভাঙলাম। ‘অসাধারন! আমি
আর কখনো সরাসরি এত ভাল গান শুনিনি।’ ‘তুমি কি
আমার একটা উপকার করবে?’ হঠাৎ কথার প্রসঙ্গ
বদলে যাওয়ায় থতমত খেলাম। তাও বললাম
‘অবশ্যই। বলো কি করতে হবে?’ ‘তুমি ঢাকায়
গেলে আমার কিছু চিঠি কোন একটা
পোস্টবাক্সে পোস্ট করে দিতে পারবে?’
‘ও,এই ব্যাপার! এ আর এমন কি?! লিখে দিও। নিয়ে
যাব।’ ‘লেখা আছে। এই যে।’ বলে আমাকে কিছু
হলুদ খাম বাড়িয়ে দিল। ‘কিসের চিঠি এগুলো? এই
মোবাইল, ফেসবুকের যুগে চিঠি কেন?!’
কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম। ‘দয়া করে
কোন কিছু জিজ্ঞেস না করলে খুশি হব।’ আমিও
আর কিছুজিজ্ঞেস করলাম না। তখনও বুঝিনি কি
সর্বনাশ করতে চলেছি আমি। এর দুদিন পর ঢাকায়
ফিরে তিনটি চিঠি পোস্ট করে দিলাম। তার তিন দিন
পরেই পেলাম ভয়াবহ দুঃসংবাদগুলো। তিনটি বিভৎস
মৃত্যু। না শুধু মৃত্যু নয়। অপঘাতে মৃত্যু! একটি লাশ
পাওয়া যায় দিঘীর পাড়ে উলটাহয়ে ঝুলে আছে।
ঘাড় পেছন দিকে বাঁকানো। ২য় লাশটি পাওয়া যায়
ঘরের সিলিং থেকে ফায়ারপ্লেসের উপর কাত
হয়ে আছে; শরীরের অর্ধেক আগুনে
ঝলসানো। ৩য় লাশটি সিড়ি ঘরে উলটে পড়েছিল;
ঘাড় থেকে মাথা আলাদা, চোখ উল্টে আছে।
বোঝাই যাচ্ছে, তিনজনই খুব কষ্ট পেয়ে মারা
গেছে। লাশের বিভৎসতা দেখে গ্রামবাসীরা
পর্যন্ত কাছে যাওয়ার সাহস পায়নি। আমি গ্রামের
এক বৃদ্ধ প্রবীনের কাছেশুনি রাজবাড়ির ইতিহাস। ১৩
বছর বয়সে এই রাজবাড়িতে বউ হয়ে এসেছিল
শুভ্রতা দেবী। বাসর রাতেই প্রচন্ড ভেদবমিতে
স্বামী মারা যায়! গ্রামবাসী বলছিল, কি সর্বনাশী
মেয়ে গো! বাসর রাতেই স্বামী হরন! এ তো
মেয়ে নয়,সাক্ষাত রাক্ষসী! তার ভাগ্য যে
তাকে স্বামীর চিতায় পোড়ানো হয়নি। তারও
ব্যবস্থা হয়েছিল। শুভ্রতার ৭ বছরের ছোট ভাই
আর বিধবা মায়ের কারনে তা সম্ভব হয়নি। এর শাস্তি
স্বরুপ শুভ্রতার সামনেই সেই বালক শিশুটিকে
গাছের সাথে বেধে প্রহার করা হলো। অত:পর
গ্রাম হতে নির্বাসন। আর শুভ্রতা?? এই পাপের
প্রাসাদে বন্দী করা হয় আর চালানো হয় অমানুষিক
নির্যাতন। এর থেকে মুক্তির জন্য আত্মহত্যার পথ
বেছে নেয়। কিন্তু,তাতে তার দেহটাই মুক্তি পায়।
তার নির্যাতিত অশান্ত আত্মাটা এই রাজবাড়ির সীমানায়
বন্দী হয়ে থাকে। ঘুরতে থাকে
প্রতিশোধের নেশায়। এই রাজবাড়ির সীমানায়
অনেক ঘরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। বাকিরা গ্রাম
ছেড়ে পালায়। জমিদারবাড়ির সবাইকেই নির্মমভাবে
শেষ করে। কিন্তু এই বাড়ির তিনটি ছেলে ঢাকায়
চলে যায়। তারাই শুভ্রতাকে বেশি নির্যাতন
করেছিল। তাদের জন্য জন্যই এত বছরের
প্রতীক্ষা। আত্মা রাজবাড়ির সীমানার বাইরে
যেতে পারত না। তাই চিঠি দিয়ে তাদের এখানে
ডেকে আনে। তাদের আজ নিশ্চিহ্ন করে মুক্তি
পেল শুভ্রতাদেবীর অশান্ত আত্মা। আমি হতবাক
হয়ে শুনি আর ভাবি। কখনো নিজেকে অপরাধী
ভাবি। কখনো বা ভাবি আমি এক মজলুম বন্দিনীর
মুক্তির প্রদীপ। সবকিছু ছাপিয়ে যখন শুভ্রতার সে
নির্মল মুখটা ভেসে ওঠে, তার সে সুরেলা
গানেরকলতান মনে পড়ে তখন নিজেকে সকল
পাপের উর্ধ্বে মনে হয়। গ্রামবাসী এখন ঐ
বাড়ির নাম শুনলেও চমকে ওঠে।কিন্তু আমি
এখনো একা রাজবাড়ির সে শ্মশানঘাটে গিয়ে
বসে থাকি, রাজবাড়ির পাশে বয়ে চলা নদীর পাড়
ধরে হেটে চলি নির্ভয়ে।এমনকি পূর্নিমা রাতেও
যাই শুভ্রতার জন্যই। ইশ, অন্তত একবারও যদি দেখা
দিত তাহলে বলতাম এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে
অন্ততএকজন হলেও আছে যে তোমাকে তার
সমগ্র সত্ত্বা দিয়ে অনুভব করে, যে তোমার
দেখা পাওয়ার জন্য বার বার ফিরে ফিরে আসে এই
জনমানবহীন গায়ে।

প্রকাশক: Pisach (পিশাচ) A ghost story

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

ফ্ল্যাট নং 06A

আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে । এই বৃষ্টি
মাথায় নিয়েই ক্লাস করে কাজ শেষে
সন্ধ্যায় আমার হোস্টেলে ফিরলাম। মাত্র
কয়েক দিন হল আমি এই পরবাসের জীবনে
দিন রাত পার করছি । লিফটের সামনে
দাঁড়িয়ে ওপেন বোটমে চাপ দিলাম।
অপেক্ষার প্রহর শেষ করে লিফটের দরজা
খুলে গেল, আমি লিফটের ভিতর ঢুকে সাত
তলার যাওয়ার জন্য সেভেন বোটমে চাপ
দিলাম । লিফট উপরে চলতে শুরু করে দিল ।
মনটা কেমন যেন করছে । অদ্ভুত এক খেয়াল
উকি দিচ্ছে মনে । আজগুবি চিন্তা করতে
করতে লিফট কখনযে সাত তলায় এসে থামল
আমি টেরই পেলামনা । লিফটের দরজা
খুলে গেল, আমি ধীর পায়ে আমার
ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়ালাম ।আমার
ফ্ল্যাটের নাম্বারটা কেমন যেন আজব ০6A,
থাকি ৭ তলায় আর ফ্ল্যাটের নাম্বার হল০6A
। গাঁটা ছম ছম করছে মনে হচ্ছে অশুভ কিছু
একটা হতে যাচ্ছে । আশুভ কিছু একটা যেন
অপেক্ষা করছে আমার জন্য । সব ভয় দূর করে
দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকলাম।আজ কেউ নেই
বলেই বিভিন্ন চিন্তার দানা বাঁধছে মনের
ভিতর । আমাদের ফ্ল্যাটে মোট আমরা আট
জন থাকি। আজ কেউ নেই রুমে। তিন জন
ছেলে দেশে গিয়েছে হলি ডেতে, আর
বাকি ছেলে গুলোর আজ রাতে কাজ ।
ফ্ল্যাটে ঢুকে রুমগুলর বাতি জ্বালিয়ে
ফ্রেশ হয়ে লিভিং রুমে গিয়ে টিভি
দেখতে বসে গেলাম । এছাড়া আপাতত
আমার কোন কাজ নেই । ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি
হচ্ছে এখনো বাইরে, অন্ধকারে ছেয়ে
গেছে পুরো আকাশ । আমি টিভি দেখছি
সোফায় গাঁ হেলিয়ে দিয়ে । আমাদের
হোস্টেলে স্কাই টিভি নাই তাই একটা
ডিভিডি চালু করে দিলাম। হিন্দি ছবি
আমার ভাল লাগেনা তার পরও দেখতে
থাকলাম এক মনে । হঠাৎ টয়লেটের কল
থেকে পানি পড়ার শব্দ কানে আসল ।
ভ্রুকটি করে অলসতা ভেঙ্গে টয়লেটের
দিকে গেলাম । মনে হয় ভুলে গিয়েছিলাম
কল বন্ধ করতে, যখন মুখ হাত ধুয়েছিলাম। কল
বন্ধ করে আবার সোফায় গিয়ে বসলাম ।
আবার টিভি দেখায় মন দিলাম কিন্তু
আবারো টয়লেট থেকে পানি পরার শব্দ শুরু
হল ।
“কি ব্যপার আমি না এই মাত্র কল বন্ধ করে
দিয়ে আসলাম ।‘’ নিজেই নিজেকে প্রশ্ন
করলাম টয়লেটের দিকে তাকিয়ে। আবারো
সোফা থেকে উঠে গেলাম টয়লেটে কল
বন্ধ করার জন্য ।টয়লেটে গিয়ে দেখলাম
আবারো পানির কল থেকে পানি পড়ছে ।
আবারো ভাল করে বন্ধ করলাম । সোফার
কাছে আসতে না আসতেই আবারো
টয়লেটের সবগুলো কল থেকে পানি পরার
শব্দ পেলাম। এইবার শিড়দার বেয়ে ভয়ের
শীতল শিহরণ বয়ে গেল আমার সারা শরীরে
। সবগুলো পশম দাঁড়িয়ে গেল, বিনা
কারনেই ঠান্ডা লাগতে লাগলো আমার।
নিজের অজান্তেই পা বারালাম টয়লেটের
দিকে,প্রতিটা কদম যেন এক মণের মত
ভারী হয়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে টয়লেটের
ভিতর উকি দিয়ে দেখলাম,সবগুলো কল
থেকে একসাথে পানি পড়ছে। কাঁপা কাঁপা
পায়ে টয়লেটের ভিতর ঢুকলাম,বাতি
জ্বালিয়ে কলগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে
চেয়ে রইলাম কিছুখন তার পর ভীত সন্তুষ্ট
হয়ে কলগুলো বন্ধ করে দিলাম।খুব টাইট করে
কল গুলো বন্ধ করে আবারো ফাইনাল চেক
করে টয়লেট থেকে বের হলাম। ধীর পায়ে
আবারো লিভিং রুমে গিয়ে সোফায় বসে
হিন্দি ছবির দিকে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা
করতে লাগলাম আর মন থেকে সব ভয় দূরে
সরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। হঠাৎ
টিভির শব্দ বন্ধ হয়ে গেল আর কান্নার সুর
ভেসে আসতে লাগল, কান্নার সুর শুনে মনে
হচ্ছে কোন মেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না
করছে । ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা
কোথাথেকে কান্নার শব্দটা আসছে। আমি
এইবার সোজা হয়ে বসলাম,কান দুট খাড়া
করে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম কোন ঘর
থেকে শব্দটা আসছে। আমি সোফা থেকে
উঠে দাঁড়ালাম আর ভয়ে ভয়ে এদিক
সেদিক দেখতে লাগলাম। আমার কাছে
মনে হতে লাগল টয়লেট থেকে কান্নার
শব্দটা ভেসে আসছে, আমি টয়লেটের
কাছে আসলাম আর খুব ভাল করে শোনার
চেষ্টা করলাম আসলে ব্যপারটা কি। আমার
কি হেলুশসেনেশন হচ্ছে? টয়লেটের দরজার
কাছে আসতেই মণে হল কে যেন ভিতর
থেকে হাতের নখ দিয়ে দরজার গাঁয়ে আচর
কাটছে আর কান্নার শব্দও অনেক জড়ে
জড়ে হতে লাগলো ।আমার ভয়ে জ্ঞান
হারানোর মত অবস্থা ।আমি অনেক সাহস
সঞ্চার করে দরজার বাইরে থেকে
জিজ্ঞাস করলাম ‘‘কে? ভিতরে
ক..ক..কে?’’আমার প্রশ্নের কোন জবাব
পেলাম না কিন্তু কান্না ও আওয়াজ থেমে
গেল । আমি সাহস করে টয়লেটের দরজা
খুলে ভিতরে উঁকি দিলাম । কেউ নেই মনটা
একটু শান্ত হল। সব ঠিক দেখে ব্যপারটাকে
আমার হেলুসেনেশন ছাড়া আর কিছু রায়
দিতে পারলাম না। টয়লেটের প্রতিটা
কোনায় কোনায় চেক করলাম কিছুই নেই।
সব কিছুই ঠিক আছে , মিছে মিছে ভয়
পাচ্ছি ।কাল রাতে ঘুমাইনিতো তাই এমনটা
লাগছে। মন থেকে ভয়ে ঝেড়ে ফেলে
টয়লেট থেকে বের হয়ার সময় ঘটল অঘটন ,
আমি যেই না টয়লেট থেকে বের হব ঠিক
তখনি আমার বাম হাতটা কে যেন পিছন
দিক থেকে চেপে ধরল। হিম শীতল একটা
অনুভূতি বয়ে গেল আমার সারা শরীরে ।
মৃতদের শরীর কি এত ঠাণ্ডা হয়ে থাকে?
স্বজড়ে ‘‘কে’’ বলে চিৎকার দিয়ে পিছন
দিকে ফিরে তাকালাম । কেউ নেই!
আশ্চর্য কেউ নেই? অথচ আমার মনে হল
আমার হাত কে যেন চেপে ধরেছে ।আমি
স্পষ্ট অনুভব করেছি যে কেউ আমার হাত
চেপে ধরেছে বরফ শীতল একটা শক্ত হাত
দিয়ে । কেউ নাই পুরো টয়লেট খালি। আমি
ভয়ে ভয়ে টয়লেটের দরজা লাগিয়ে দিয়ে
লিভিং রুমের দিকে পা বাড়ালাম আর
বার বার পিছনে ফিরে টয়লেটের দরজার
দিকে তাকাতে থাকলাম । লিভিং রুমে
এসে দেখি টিভি ঠিকঠাক চলছে কোন
ডিষ্টাব নেই । আমি আবারো সোফায় বসে
টিভি দেখায় মন দিলাম । বাম হাতটা কেন
জানি একটু ব্যাথ্যা করছে, আমি আমার
ডান হাতটি দিয়ে বাম হাতে ঘষতে
লাগলাম । হঠাৎ টিভি বন্ধ হয়ে গেল,অথচ
ঘরে বিদ্যুৎ আছে। আমি লিভিং রুমের
লাইটগুলো জ্বালিয়ে রেখেছিলাম ওগুলো
জ্বলে আছে । আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই
টিভি আবার চালু হল । প্রথমে ব্লাঙ্ক তার
পর ঝিরঝির হতে লাগল। কিছুই বুঝতে
পারছিনা কি হচ্ছে এই সব আমার সাথে।
আমি কি পাগল হয়ে যাব? রিমোট নিয়ে
চ্যানেল পালটাতে থাকলাম কিন্তু কোন
কাজ হল না। ঝিরঝির শব্দ আর ঝিরঝির শব্দ
। ‘‘আরে ওটা কি?’’ টিভিতে কিছু একটা
যেন দেখতে পেলাম আমি,একটা মেয়ের
ছবি অস্পষ্ট ঝিরঝির। আরে টিভি থেকে
সেই কান্নার শব্দ ভেসে আসছে তার সাথে
একটা গোংগানির শব্দ । টয়লেটের সেই
শব্দটা আবারো কানে আসতে শুরু করলো ।
কেউ যেন নখ দিয়ে টয়লেটের দরজায় আচর
কাটছে , মনে হচ্ছে হিংস্র কোন পশু
টয়লেটে আটকা পরেছে । আমার টনক
নড়লো হচ্ছেটা কি এসব ? আমি টিভির
রিমট দিয়ে টিভির চ্যানেল বদলাতে
থাকলাম কিন্তু কোন কাজ হল না। ঝিরঝির
কিছুটা কমতে লাগল আর গোংগানির শব্দ
বারতে থাকল। তার সাথে টয়লেটের আচর
কাটার শব্দও। টিভির ঝিরঝির একে বারে
চলেগেল সেখানে আসতে আসতে একটা
মেয়ের মুখ ভেসে উঠল । আমি বুঝে উঠতে
পারছিনা আমি কি কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি
না আসলেই যা হচ্ছে তা বাস্তব ! টিভির
মধ্যে মেয়ের মুখটা আসতে আসতে কেমন
যেন বিকৃত হয়ে যাচ্ছে আর টয়লেটের আচর
কাটার শব্দও কমে যাচ্ছে। ভয়ে আমার হাত
পা অবশ হয়ে যাচ্ছে । আমি নড়াচড়ার
শক্তি হারিয়ে ফেলেছি । টিভির ভিতরের
মেয়েটার চেহারা পুরো বিকৃত হয়ে গেল
আর ঐ বিকৃত চেহারার মধ্যে এক জোড়া
লাল টকটকে চোখ চেয়ে আছে আমার
দিকে । হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পরল
মেয়েটা আর টিভি থেকে হঠাৎ গায়েব
হয়ে গেল । আর টিভিতে সেই ঝিরঝির
দেখা দিল আবার । আমি হিমশীতল হয়ে
বসে আছি , আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে
গেছে, শরীর যেন সোফার সাথে মিশে
যেতে চাচ্ছে। ঠিক তখনি আমার মনে হল
কে যেন আমার পিছনে দাঁড়িয়ে
আছে,আমার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাসের
ছোঁয়া অনুভব করছি আমি। নিঃশ্বাসের
ফোঁস ফোঁস শব্দের সাথে পশুর গোংগানির
মত কেমন যেন একটা শব্দ আসছে আমার
পিছন দিক থেকে । আমি ভয়ে আমসত্তা
হয়ে গেলাম । পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে যা
দেখলাম তা জীবনেও কোন দিন ভুলবনা ।
টিভির ভিতরে যে মেয়েটা ছিল সেই
মেয়েটাই আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ।
আমার দিকে ওর সরু হাত দুটি বাড়িয়ে
দিচ্ছে। আমি আর আমার নার্ভ সিস্টেম কে
ঠিক রাখতে পারলাম না , আমি জ্ঞান
হারানোর আগপর্যন্ত যা দেখলাম তা হল ,
‘মেয়েটা আমার পা ধরে টয়লেটের দিকে
টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি প্রান পনে
নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি । হাতের
নখ গুলো দিয়ে ফ্লরে খামচে ধরার চেষ্টা
করে যাচ্ছিলাম’ এর পর আর কিছু মনে নেই
আমার।

****

চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি। আর পাশে
বসে আছে আমার রুমম্যাট রঞ্জন । আমায়
চোখ খুলে তাকাতে দেখে ও বলল
‘‘Don’t move’ মাথায় শিলি লেগেছে
তিনটা । তুমি বাথ রুমে পরে গিয়েছিলে
কি করে?’’
‘‘আমি বাথ রুমে পরেগিয়েছিলাম?’’ মৃদ
কন্ঠে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলাম ।
‘ হু তোমার মনে নেই কিছু?, আমি রাতে
বাসায় ফিরে দেখি তোমার শরীর আধা
বাথ রুমের ভিতরে আর আধা বাইরে পরে
আছে ।আর মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে । আমি
আর দেড়ি না করে তোমাকে হসপিটালে
নিয়ে আসলাম ।’’
রঞ্জন একটু থেমে আবার আমায় বলল
‘‘আচ্ছা ডাক্তার আমায় একটা কথা
জিজ্ঞাস করেছিল ।’’
আমি মৃদু কণ্ঠে বললাম ‘কি?’
‘‘তোমার বাম হাতে আর বাম পায়ে কার
যেন হাতের ছাপ, মনে হচ্ছিল তোমাকে
কেউ খুব জোরে চেপে ধরে রেখেছিল।’’
তার মানে আমি যা দেখেছিলাম তা সব
সত্যি ।মনে মনে কথা গুলো বললাম ।
আমি সাথে সাথে আমার বাম হাতের
দিকে চাইলাম , হাতের মধে স্পষ্ট দেখা
যাচ্ছে পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ , আমি কোন
মতে বসে আমার পায়ের দিকে তাকালাম ,
ওখানেও একই অবস্থা ।
বছর খানেক পর , আমার শরীরে আজও সেই
আঙ্গুলের ছাপ আছে । আজ ও আমি সেই
দিনের কথা মনে করে নিজে নিজেই
শিউরে উঠি। সেই ঘটনার পর আমি আর সেই
হোষ্টেলে থাকতে পানিরি । আমি
হোষ্টেল চেঞ্জ করে ডাবলিনের এক
বাঙ্গালীর বাড়িতে পেয়িং গেস্ট
হিসাবে উঠেছি । পরে খোঁজ নিয়ে
জানতে পেরেছি যে ঐ ফ্ল্যাট নং 06A
তে এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে , আমিই
প্রথম না।ঐটা একটা হন্টিং ফ্ল্যাট। আমি
আসার পর ও একে একে সবাই কিছু না কিছু
অঘটনের শিকার হয়েছে । হয়ত কোন দিনো
এর কূলকিনারা করতে পারব না কিন্তু কিছু
একটা রহস্য আছে যা অজানাই রয়ে গেল।

প্রকাশক:Pishach (পিশাচ) A Ghost Story