আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে । এই বৃষ্টি
মাথায় নিয়েই ক্লাস করে কাজ শেষে
সন্ধ্যায় আমার হোস্টেলে ফিরলাম। মাত্র
কয়েক দিন হল আমি এই পরবাসের জীবনে
দিন রাত পার করছি । লিফটের সামনে
দাঁড়িয়ে ওপেন বোটমে চাপ দিলাম।
অপেক্ষার প্রহর শেষ করে লিফটের দরজা
খুলে গেল, আমি লিফটের ভিতর ঢুকে সাত
তলার যাওয়ার জন্য সেভেন বোটমে চাপ
দিলাম । লিফট উপরে চলতে শুরু করে দিল ।
মনটা কেমন যেন করছে । অদ্ভুত এক খেয়াল
উকি দিচ্ছে মনে । আজগুবি চিন্তা করতে
করতে লিফট কখনযে সাত তলায় এসে থামল
আমি টেরই পেলামনা । লিফটের দরজা
খুলে গেল, আমি ধীর পায়ে আমার
ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়ালাম ।আমার
ফ্ল্যাটের নাম্বারটা কেমন যেন আজব ০6A,
থাকি ৭ তলায় আর ফ্ল্যাটের নাম্বার হল০6A
। গাঁটা ছম ছম করছে মনে হচ্ছে অশুভ কিছু
একটা হতে যাচ্ছে । আশুভ কিছু একটা যেন
অপেক্ষা করছে আমার জন্য । সব ভয় দূর করে
দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকলাম।আজ কেউ নেই
বলেই বিভিন্ন চিন্তার দানা বাঁধছে মনের
ভিতর । আমাদের ফ্ল্যাটে মোট আমরা আট
জন থাকি। আজ কেউ নেই রুমে। তিন জন
ছেলে দেশে গিয়েছে হলি ডেতে, আর
বাকি ছেলে গুলোর আজ রাতে কাজ ।
ফ্ল্যাটে ঢুকে রুমগুলর বাতি জ্বালিয়ে
ফ্রেশ হয়ে লিভিং রুমে গিয়ে টিভি
দেখতে বসে গেলাম । এছাড়া আপাতত
আমার কোন কাজ নেই । ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি
হচ্ছে এখনো বাইরে, অন্ধকারে ছেয়ে
গেছে পুরো আকাশ । আমি টিভি দেখছি
সোফায় গাঁ হেলিয়ে দিয়ে । আমাদের
হোস্টেলে স্কাই টিভি নাই তাই একটা
ডিভিডি চালু করে দিলাম। হিন্দি ছবি
আমার ভাল লাগেনা তার পরও দেখতে
থাকলাম এক মনে । হঠাৎ টয়লেটের কল
থেকে পানি পড়ার শব্দ কানে আসল ।
ভ্রুকটি করে অলসতা ভেঙ্গে টয়লেটের
দিকে গেলাম । মনে হয় ভুলে গিয়েছিলাম
কল বন্ধ করতে, যখন মুখ হাত ধুয়েছিলাম। কল
বন্ধ করে আবার সোফায় গিয়ে বসলাম ।
আবার টিভি দেখায় মন দিলাম কিন্তু
আবারো টয়লেট থেকে পানি পরার শব্দ শুরু
হল ।
“কি ব্যপার আমি না এই মাত্র কল বন্ধ করে
দিয়ে আসলাম ।‘’ নিজেই নিজেকে প্রশ্ন
করলাম টয়লেটের দিকে তাকিয়ে। আবারো
সোফা থেকে উঠে গেলাম টয়লেটে কল
বন্ধ করার জন্য ।টয়লেটে গিয়ে দেখলাম
আবারো পানির কল থেকে পানি পড়ছে ।
আবারো ভাল করে বন্ধ করলাম । সোফার
কাছে আসতে না আসতেই আবারো
টয়লেটের সবগুলো কল থেকে পানি পরার
শব্দ পেলাম। এইবার শিড়দার বেয়ে ভয়ের
শীতল শিহরণ বয়ে গেল আমার সারা শরীরে
। সবগুলো পশম দাঁড়িয়ে গেল, বিনা
কারনেই ঠান্ডা লাগতে লাগলো আমার।
নিজের অজান্তেই পা বারালাম টয়লেটের
দিকে,প্রতিটা কদম যেন এক মণের মত
ভারী হয়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে টয়লেটের
ভিতর উকি দিয়ে দেখলাম,সবগুলো কল
থেকে একসাথে পানি পড়ছে। কাঁপা কাঁপা
পায়ে টয়লেটের ভিতর ঢুকলাম,বাতি
জ্বালিয়ে কলগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে
চেয়ে রইলাম কিছুখন তার পর ভীত সন্তুষ্ট
হয়ে কলগুলো বন্ধ করে দিলাম।খুব টাইট করে
কল গুলো বন্ধ করে আবারো ফাইনাল চেক
করে টয়লেট থেকে বের হলাম। ধীর পায়ে
আবারো লিভিং রুমে গিয়ে সোফায় বসে
হিন্দি ছবির দিকে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা
করতে লাগলাম আর মন থেকে সব ভয় দূরে
সরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। হঠাৎ
টিভির শব্দ বন্ধ হয়ে গেল আর কান্নার সুর
ভেসে আসতে লাগল, কান্নার সুর শুনে মনে
হচ্ছে কোন মেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না
করছে । ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা
কোথাথেকে কান্নার শব্দটা আসছে। আমি
এইবার সোজা হয়ে বসলাম,কান দুট খাড়া
করে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম কোন ঘর
থেকে শব্দটা আসছে। আমি সোফা থেকে
উঠে দাঁড়ালাম আর ভয়ে ভয়ে এদিক
সেদিক দেখতে লাগলাম। আমার কাছে
মনে হতে লাগল টয়লেট থেকে কান্নার
শব্দটা ভেসে আসছে, আমি টয়লেটের
কাছে আসলাম আর খুব ভাল করে শোনার
চেষ্টা করলাম আসলে ব্যপারটা কি। আমার
কি হেলুশসেনেশন হচ্ছে? টয়লেটের দরজার
কাছে আসতেই মণে হল কে যেন ভিতর
থেকে হাতের নখ দিয়ে দরজার গাঁয়ে আচর
কাটছে আর কান্নার শব্দও অনেক জড়ে
জড়ে হতে লাগলো ।আমার ভয়ে জ্ঞান
হারানোর মত অবস্থা ।আমি অনেক সাহস
সঞ্চার করে দরজার বাইরে থেকে
জিজ্ঞাস করলাম ‘‘কে? ভিতরে
ক..ক..কে?’’আমার প্রশ্নের কোন জবাব
পেলাম না কিন্তু কান্না ও আওয়াজ থেমে
গেল । আমি সাহস করে টয়লেটের দরজা
খুলে ভিতরে উঁকি দিলাম । কেউ নেই মনটা
একটু শান্ত হল। সব ঠিক দেখে ব্যপারটাকে
আমার হেলুসেনেশন ছাড়া আর কিছু রায়
দিতে পারলাম না। টয়লেটের প্রতিটা
কোনায় কোনায় চেক করলাম কিছুই নেই।
সব কিছুই ঠিক আছে , মিছে মিছে ভয়
পাচ্ছি ।কাল রাতে ঘুমাইনিতো তাই এমনটা
লাগছে। মন থেকে ভয়ে ঝেড়ে ফেলে
টয়লেট থেকে বের হয়ার সময় ঘটল অঘটন ,
আমি যেই না টয়লেট থেকে বের হব ঠিক
তখনি আমার বাম হাতটা কে যেন পিছন
দিক থেকে চেপে ধরল। হিম শীতল একটা
অনুভূতি বয়ে গেল আমার সারা শরীরে ।
মৃতদের শরীর কি এত ঠাণ্ডা হয়ে থাকে?
স্বজড়ে ‘‘কে’’ বলে চিৎকার দিয়ে পিছন
দিকে ফিরে তাকালাম । কেউ নেই!
আশ্চর্য কেউ নেই? অথচ আমার মনে হল
আমার হাত কে যেন চেপে ধরেছে ।আমি
স্পষ্ট অনুভব করেছি যে কেউ আমার হাত
চেপে ধরেছে বরফ শীতল একটা শক্ত হাত
দিয়ে । কেউ নাই পুরো টয়লেট খালি। আমি
ভয়ে ভয়ে টয়লেটের দরজা লাগিয়ে দিয়ে
লিভিং রুমের দিকে পা বাড়ালাম আর
বার বার পিছনে ফিরে টয়লেটের দরজার
দিকে তাকাতে থাকলাম । লিভিং রুমে
এসে দেখি টিভি ঠিকঠাক চলছে কোন
ডিষ্টাব নেই । আমি আবারো সোফায় বসে
টিভি দেখায় মন দিলাম । বাম হাতটা কেন
জানি একটু ব্যাথ্যা করছে, আমি আমার
ডান হাতটি দিয়ে বাম হাতে ঘষতে
লাগলাম । হঠাৎ টিভি বন্ধ হয়ে গেল,অথচ
ঘরে বিদ্যুৎ আছে। আমি লিভিং রুমের
লাইটগুলো জ্বালিয়ে রেখেছিলাম ওগুলো
জ্বলে আছে । আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই
টিভি আবার চালু হল । প্রথমে ব্লাঙ্ক তার
পর ঝিরঝির হতে লাগল। কিছুই বুঝতে
পারছিনা কি হচ্ছে এই সব আমার সাথে।
আমি কি পাগল হয়ে যাব? রিমোট নিয়ে
চ্যানেল পালটাতে থাকলাম কিন্তু কোন
কাজ হল না। ঝিরঝির শব্দ আর ঝিরঝির শব্দ
। ‘‘আরে ওটা কি?’’ টিভিতে কিছু একটা
যেন দেখতে পেলাম আমি,একটা মেয়ের
ছবি অস্পষ্ট ঝিরঝির। আরে টিভি থেকে
সেই কান্নার শব্দ ভেসে আসছে তার সাথে
একটা গোংগানির শব্দ । টয়লেটের সেই
শব্দটা আবারো কানে আসতে শুরু করলো ।
কেউ যেন নখ দিয়ে টয়লেটের দরজায় আচর
কাটছে , মনে হচ্ছে হিংস্র কোন পশু
টয়লেটে আটকা পরেছে । আমার টনক
নড়লো হচ্ছেটা কি এসব ? আমি টিভির
রিমট দিয়ে টিভির চ্যানেল বদলাতে
থাকলাম কিন্তু কোন কাজ হল না। ঝিরঝির
কিছুটা কমতে লাগল আর গোংগানির শব্দ
বারতে থাকল। তার সাথে টয়লেটের আচর
কাটার শব্দও। টিভির ঝিরঝির একে বারে
চলেগেল সেখানে আসতে আসতে একটা
মেয়ের মুখ ভেসে উঠল । আমি বুঝে উঠতে
পারছিনা আমি কি কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি
না আসলেই যা হচ্ছে তা বাস্তব ! টিভির
মধ্যে মেয়ের মুখটা আসতে আসতে কেমন
যেন বিকৃত হয়ে যাচ্ছে আর টয়লেটের আচর
কাটার শব্দও কমে যাচ্ছে। ভয়ে আমার হাত
পা অবশ হয়ে যাচ্ছে । আমি নড়াচড়ার
শক্তি হারিয়ে ফেলেছি । টিভির ভিতরের
মেয়েটার চেহারা পুরো বিকৃত হয়ে গেল
আর ঐ বিকৃত চেহারার মধ্যে এক জোড়া
লাল টকটকে চোখ চেয়ে আছে আমার
দিকে । হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পরল
মেয়েটা আর টিভি থেকে হঠাৎ গায়েব
হয়ে গেল । আর টিভিতে সেই ঝিরঝির
দেখা দিল আবার । আমি হিমশীতল হয়ে
বসে আছি , আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে
গেছে, শরীর যেন সোফার সাথে মিশে
যেতে চাচ্ছে। ঠিক তখনি আমার মনে হল
কে যেন আমার পিছনে দাঁড়িয়ে
আছে,আমার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাসের
ছোঁয়া অনুভব করছি আমি। নিঃশ্বাসের
ফোঁস ফোঁস শব্দের সাথে পশুর গোংগানির
মত কেমন যেন একটা শব্দ আসছে আমার
পিছন দিক থেকে । আমি ভয়ে আমসত্তা
হয়ে গেলাম । পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে যা
দেখলাম তা জীবনেও কোন দিন ভুলবনা ।
টিভির ভিতরে যে মেয়েটা ছিল সেই
মেয়েটাই আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ।
আমার দিকে ওর সরু হাত দুটি বাড়িয়ে
দিচ্ছে। আমি আর আমার নার্ভ সিস্টেম কে
ঠিক রাখতে পারলাম না , আমি জ্ঞান
হারানোর আগপর্যন্ত যা দেখলাম তা হল ,
‘মেয়েটা আমার পা ধরে টয়লেটের দিকে
টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি প্রান পনে
নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি । হাতের
নখ গুলো দিয়ে ফ্লরে খামচে ধরার চেষ্টা
করে যাচ্ছিলাম’ এর পর আর কিছু মনে নেই
আমার।
****
চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি। আর পাশে
বসে আছে আমার রুমম্যাট রঞ্জন । আমায়
চোখ খুলে তাকাতে দেখে ও বলল
‘‘Don’t move’ মাথায় শিলি লেগেছে
তিনটা । তুমি বাথ রুমে পরে গিয়েছিলে
কি করে?’’
‘‘আমি বাথ রুমে পরেগিয়েছিলাম?’’ মৃদ
কন্ঠে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলাম ।
‘ হু তোমার মনে নেই কিছু?, আমি রাতে
বাসায় ফিরে দেখি তোমার শরীর আধা
বাথ রুমের ভিতরে আর আধা বাইরে পরে
আছে ।আর মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে । আমি
আর দেড়ি না করে তোমাকে হসপিটালে
নিয়ে আসলাম ।’’
রঞ্জন একটু থেমে আবার আমায় বলল
‘‘আচ্ছা ডাক্তার আমায় একটা কথা
জিজ্ঞাস করেছিল ।’’
আমি মৃদু কণ্ঠে বললাম ‘কি?’
‘‘তোমার বাম হাতে আর বাম পায়ে কার
যেন হাতের ছাপ, মনে হচ্ছিল তোমাকে
কেউ খুব জোরে চেপে ধরে রেখেছিল।’’
তার মানে আমি যা দেখেছিলাম তা সব
সত্যি ।মনে মনে কথা গুলো বললাম ।
আমি সাথে সাথে আমার বাম হাতের
দিকে চাইলাম , হাতের মধে স্পষ্ট দেখা
যাচ্ছে পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ , আমি কোন
মতে বসে আমার পায়ের দিকে তাকালাম ,
ওখানেও একই অবস্থা ।
বছর খানেক পর , আমার শরীরে আজও সেই
আঙ্গুলের ছাপ আছে । আজ ও আমি সেই
দিনের কথা মনে করে নিজে নিজেই
শিউরে উঠি। সেই ঘটনার পর আমি আর সেই
হোষ্টেলে থাকতে পানিরি । আমি
হোষ্টেল চেঞ্জ করে ডাবলিনের এক
বাঙ্গালীর বাড়িতে পেয়িং গেস্ট
হিসাবে উঠেছি । পরে খোঁজ নিয়ে
জানতে পেরেছি যে ঐ ফ্ল্যাট নং 06A
তে এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে , আমিই
প্রথম না।ঐটা একটা হন্টিং ফ্ল্যাট। আমি
আসার পর ও একে একে সবাই কিছু না কিছু
অঘটনের শিকার হয়েছে । হয়ত কোন দিনো
এর কূলকিনারা করতে পারব না কিন্তু কিছু
একটা রহস্য আছে যা অজানাই রয়ে গেল।
প্রকাশক:Pishach (পিশাচ) A Ghost Story
মাথায় নিয়েই ক্লাস করে কাজ শেষে
সন্ধ্যায় আমার হোস্টেলে ফিরলাম। মাত্র
কয়েক দিন হল আমি এই পরবাসের জীবনে
দিন রাত পার করছি । লিফটের সামনে
দাঁড়িয়ে ওপেন বোটমে চাপ দিলাম।
অপেক্ষার প্রহর শেষ করে লিফটের দরজা
খুলে গেল, আমি লিফটের ভিতর ঢুকে সাত
তলার যাওয়ার জন্য সেভেন বোটমে চাপ
দিলাম । লিফট উপরে চলতে শুরু করে দিল ।
মনটা কেমন যেন করছে । অদ্ভুত এক খেয়াল
উকি দিচ্ছে মনে । আজগুবি চিন্তা করতে
করতে লিফট কখনযে সাত তলায় এসে থামল
আমি টেরই পেলামনা । লিফটের দরজা
খুলে গেল, আমি ধীর পায়ে আমার
ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়ালাম ।আমার
ফ্ল্যাটের নাম্বারটা কেমন যেন আজব ০6A,
থাকি ৭ তলায় আর ফ্ল্যাটের নাম্বার হল০6A
। গাঁটা ছম ছম করছে মনে হচ্ছে অশুভ কিছু
একটা হতে যাচ্ছে । আশুভ কিছু একটা যেন
অপেক্ষা করছে আমার জন্য । সব ভয় দূর করে
দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকলাম।আজ কেউ নেই
বলেই বিভিন্ন চিন্তার দানা বাঁধছে মনের
ভিতর । আমাদের ফ্ল্যাটে মোট আমরা আট
জন থাকি। আজ কেউ নেই রুমে। তিন জন
ছেলে দেশে গিয়েছে হলি ডেতে, আর
বাকি ছেলে গুলোর আজ রাতে কাজ ।
ফ্ল্যাটে ঢুকে রুমগুলর বাতি জ্বালিয়ে
ফ্রেশ হয়ে লিভিং রুমে গিয়ে টিভি
দেখতে বসে গেলাম । এছাড়া আপাতত
আমার কোন কাজ নেই । ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি
হচ্ছে এখনো বাইরে, অন্ধকারে ছেয়ে
গেছে পুরো আকাশ । আমি টিভি দেখছি
সোফায় গাঁ হেলিয়ে দিয়ে । আমাদের
হোস্টেলে স্কাই টিভি নাই তাই একটা
ডিভিডি চালু করে দিলাম। হিন্দি ছবি
আমার ভাল লাগেনা তার পরও দেখতে
থাকলাম এক মনে । হঠাৎ টয়লেটের কল
থেকে পানি পড়ার শব্দ কানে আসল ।
ভ্রুকটি করে অলসতা ভেঙ্গে টয়লেটের
দিকে গেলাম । মনে হয় ভুলে গিয়েছিলাম
কল বন্ধ করতে, যখন মুখ হাত ধুয়েছিলাম। কল
বন্ধ করে আবার সোফায় গিয়ে বসলাম ।
আবার টিভি দেখায় মন দিলাম কিন্তু
আবারো টয়লেট থেকে পানি পরার শব্দ শুরু
হল ।
“কি ব্যপার আমি না এই মাত্র কল বন্ধ করে
দিয়ে আসলাম ।‘’ নিজেই নিজেকে প্রশ্ন
করলাম টয়লেটের দিকে তাকিয়ে। আবারো
সোফা থেকে উঠে গেলাম টয়লেটে কল
বন্ধ করার জন্য ।টয়লেটে গিয়ে দেখলাম
আবারো পানির কল থেকে পানি পড়ছে ।
আবারো ভাল করে বন্ধ করলাম । সোফার
কাছে আসতে না আসতেই আবারো
টয়লেটের সবগুলো কল থেকে পানি পরার
শব্দ পেলাম। এইবার শিড়দার বেয়ে ভয়ের
শীতল শিহরণ বয়ে গেল আমার সারা শরীরে
। সবগুলো পশম দাঁড়িয়ে গেল, বিনা
কারনেই ঠান্ডা লাগতে লাগলো আমার।
নিজের অজান্তেই পা বারালাম টয়লেটের
দিকে,প্রতিটা কদম যেন এক মণের মত
ভারী হয়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে টয়লেটের
ভিতর উকি দিয়ে দেখলাম,সবগুলো কল
থেকে একসাথে পানি পড়ছে। কাঁপা কাঁপা
পায়ে টয়লেটের ভিতর ঢুকলাম,বাতি
জ্বালিয়ে কলগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে
চেয়ে রইলাম কিছুখন তার পর ভীত সন্তুষ্ট
হয়ে কলগুলো বন্ধ করে দিলাম।খুব টাইট করে
কল গুলো বন্ধ করে আবারো ফাইনাল চেক
করে টয়লেট থেকে বের হলাম। ধীর পায়ে
আবারো লিভিং রুমে গিয়ে সোফায় বসে
হিন্দি ছবির দিকে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা
করতে লাগলাম আর মন থেকে সব ভয় দূরে
সরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। হঠাৎ
টিভির শব্দ বন্ধ হয়ে গেল আর কান্নার সুর
ভেসে আসতে লাগল, কান্নার সুর শুনে মনে
হচ্ছে কোন মেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না
করছে । ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা
কোথাথেকে কান্নার শব্দটা আসছে। আমি
এইবার সোজা হয়ে বসলাম,কান দুট খাড়া
করে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম কোন ঘর
থেকে শব্দটা আসছে। আমি সোফা থেকে
উঠে দাঁড়ালাম আর ভয়ে ভয়ে এদিক
সেদিক দেখতে লাগলাম। আমার কাছে
মনে হতে লাগল টয়লেট থেকে কান্নার
শব্দটা ভেসে আসছে, আমি টয়লেটের
কাছে আসলাম আর খুব ভাল করে শোনার
চেষ্টা করলাম আসলে ব্যপারটা কি। আমার
কি হেলুশসেনেশন হচ্ছে? টয়লেটের দরজার
কাছে আসতেই মণে হল কে যেন ভিতর
থেকে হাতের নখ দিয়ে দরজার গাঁয়ে আচর
কাটছে আর কান্নার শব্দও অনেক জড়ে
জড়ে হতে লাগলো ।আমার ভয়ে জ্ঞান
হারানোর মত অবস্থা ।আমি অনেক সাহস
সঞ্চার করে দরজার বাইরে থেকে
জিজ্ঞাস করলাম ‘‘কে? ভিতরে
ক..ক..কে?’’আমার প্রশ্নের কোন জবাব
পেলাম না কিন্তু কান্না ও আওয়াজ থেমে
গেল । আমি সাহস করে টয়লেটের দরজা
খুলে ভিতরে উঁকি দিলাম । কেউ নেই মনটা
একটু শান্ত হল। সব ঠিক দেখে ব্যপারটাকে
আমার হেলুসেনেশন ছাড়া আর কিছু রায়
দিতে পারলাম না। টয়লেটের প্রতিটা
কোনায় কোনায় চেক করলাম কিছুই নেই।
সব কিছুই ঠিক আছে , মিছে মিছে ভয়
পাচ্ছি ।কাল রাতে ঘুমাইনিতো তাই এমনটা
লাগছে। মন থেকে ভয়ে ঝেড়ে ফেলে
টয়লেট থেকে বের হয়ার সময় ঘটল অঘটন ,
আমি যেই না টয়লেট থেকে বের হব ঠিক
তখনি আমার বাম হাতটা কে যেন পিছন
দিক থেকে চেপে ধরল। হিম শীতল একটা
অনুভূতি বয়ে গেল আমার সারা শরীরে ।
মৃতদের শরীর কি এত ঠাণ্ডা হয়ে থাকে?
স্বজড়ে ‘‘কে’’ বলে চিৎকার দিয়ে পিছন
দিকে ফিরে তাকালাম । কেউ নেই!
আশ্চর্য কেউ নেই? অথচ আমার মনে হল
আমার হাত কে যেন চেপে ধরেছে ।আমি
স্পষ্ট অনুভব করেছি যে কেউ আমার হাত
চেপে ধরেছে বরফ শীতল একটা শক্ত হাত
দিয়ে । কেউ নাই পুরো টয়লেট খালি। আমি
ভয়ে ভয়ে টয়লেটের দরজা লাগিয়ে দিয়ে
লিভিং রুমের দিকে পা বাড়ালাম আর
বার বার পিছনে ফিরে টয়লেটের দরজার
দিকে তাকাতে থাকলাম । লিভিং রুমে
এসে দেখি টিভি ঠিকঠাক চলছে কোন
ডিষ্টাব নেই । আমি আবারো সোফায় বসে
টিভি দেখায় মন দিলাম । বাম হাতটা কেন
জানি একটু ব্যাথ্যা করছে, আমি আমার
ডান হাতটি দিয়ে বাম হাতে ঘষতে
লাগলাম । হঠাৎ টিভি বন্ধ হয়ে গেল,অথচ
ঘরে বিদ্যুৎ আছে। আমি লিভিং রুমের
লাইটগুলো জ্বালিয়ে রেখেছিলাম ওগুলো
জ্বলে আছে । আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই
টিভি আবার চালু হল । প্রথমে ব্লাঙ্ক তার
পর ঝিরঝির হতে লাগল। কিছুই বুঝতে
পারছিনা কি হচ্ছে এই সব আমার সাথে।
আমি কি পাগল হয়ে যাব? রিমোট নিয়ে
চ্যানেল পালটাতে থাকলাম কিন্তু কোন
কাজ হল না। ঝিরঝির শব্দ আর ঝিরঝির শব্দ
। ‘‘আরে ওটা কি?’’ টিভিতে কিছু একটা
যেন দেখতে পেলাম আমি,একটা মেয়ের
ছবি অস্পষ্ট ঝিরঝির। আরে টিভি থেকে
সেই কান্নার শব্দ ভেসে আসছে তার সাথে
একটা গোংগানির শব্দ । টয়লেটের সেই
শব্দটা আবারো কানে আসতে শুরু করলো ।
কেউ যেন নখ দিয়ে টয়লেটের দরজায় আচর
কাটছে , মনে হচ্ছে হিংস্র কোন পশু
টয়লেটে আটকা পরেছে । আমার টনক
নড়লো হচ্ছেটা কি এসব ? আমি টিভির
রিমট দিয়ে টিভির চ্যানেল বদলাতে
থাকলাম কিন্তু কোন কাজ হল না। ঝিরঝির
কিছুটা কমতে লাগল আর গোংগানির শব্দ
বারতে থাকল। তার সাথে টয়লেটের আচর
কাটার শব্দও। টিভির ঝিরঝির একে বারে
চলেগেল সেখানে আসতে আসতে একটা
মেয়ের মুখ ভেসে উঠল । আমি বুঝে উঠতে
পারছিনা আমি কি কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি
না আসলেই যা হচ্ছে তা বাস্তব ! টিভির
মধ্যে মেয়ের মুখটা আসতে আসতে কেমন
যেন বিকৃত হয়ে যাচ্ছে আর টয়লেটের আচর
কাটার শব্দও কমে যাচ্ছে। ভয়ে আমার হাত
পা অবশ হয়ে যাচ্ছে । আমি নড়াচড়ার
শক্তি হারিয়ে ফেলেছি । টিভির ভিতরের
মেয়েটার চেহারা পুরো বিকৃত হয়ে গেল
আর ঐ বিকৃত চেহারার মধ্যে এক জোড়া
লাল টকটকে চোখ চেয়ে আছে আমার
দিকে । হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পরল
মেয়েটা আর টিভি থেকে হঠাৎ গায়েব
হয়ে গেল । আর টিভিতে সেই ঝিরঝির
দেখা দিল আবার । আমি হিমশীতল হয়ে
বসে আছি , আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে
গেছে, শরীর যেন সোফার সাথে মিশে
যেতে চাচ্ছে। ঠিক তখনি আমার মনে হল
কে যেন আমার পিছনে দাঁড়িয়ে
আছে,আমার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাসের
ছোঁয়া অনুভব করছি আমি। নিঃশ্বাসের
ফোঁস ফোঁস শব্দের সাথে পশুর গোংগানির
মত কেমন যেন একটা শব্দ আসছে আমার
পিছন দিক থেকে । আমি ভয়ে আমসত্তা
হয়ে গেলাম । পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে যা
দেখলাম তা জীবনেও কোন দিন ভুলবনা ।
টিভির ভিতরে যে মেয়েটা ছিল সেই
মেয়েটাই আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ।
আমার দিকে ওর সরু হাত দুটি বাড়িয়ে
দিচ্ছে। আমি আর আমার নার্ভ সিস্টেম কে
ঠিক রাখতে পারলাম না , আমি জ্ঞান
হারানোর আগপর্যন্ত যা দেখলাম তা হল ,
‘মেয়েটা আমার পা ধরে টয়লেটের দিকে
টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি প্রান পনে
নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি । হাতের
নখ গুলো দিয়ে ফ্লরে খামচে ধরার চেষ্টা
করে যাচ্ছিলাম’ এর পর আর কিছু মনে নেই
আমার।
****
চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি। আর পাশে
বসে আছে আমার রুমম্যাট রঞ্জন । আমায়
চোখ খুলে তাকাতে দেখে ও বলল
‘‘Don’t move’ মাথায় শিলি লেগেছে
তিনটা । তুমি বাথ রুমে পরে গিয়েছিলে
কি করে?’’
‘‘আমি বাথ রুমে পরেগিয়েছিলাম?’’ মৃদ
কন্ঠে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলাম ।
‘ হু তোমার মনে নেই কিছু?, আমি রাতে
বাসায় ফিরে দেখি তোমার শরীর আধা
বাথ রুমের ভিতরে আর আধা বাইরে পরে
আছে ।আর মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে । আমি
আর দেড়ি না করে তোমাকে হসপিটালে
নিয়ে আসলাম ।’’
রঞ্জন একটু থেমে আবার আমায় বলল
‘‘আচ্ছা ডাক্তার আমায় একটা কথা
জিজ্ঞাস করেছিল ।’’
আমি মৃদু কণ্ঠে বললাম ‘কি?’
‘‘তোমার বাম হাতে আর বাম পায়ে কার
যেন হাতের ছাপ, মনে হচ্ছিল তোমাকে
কেউ খুব জোরে চেপে ধরে রেখেছিল।’’
তার মানে আমি যা দেখেছিলাম তা সব
সত্যি ।মনে মনে কথা গুলো বললাম ।
আমি সাথে সাথে আমার বাম হাতের
দিকে চাইলাম , হাতের মধে স্পষ্ট দেখা
যাচ্ছে পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ , আমি কোন
মতে বসে আমার পায়ের দিকে তাকালাম ,
ওখানেও একই অবস্থা ।
বছর খানেক পর , আমার শরীরে আজও সেই
আঙ্গুলের ছাপ আছে । আজ ও আমি সেই
দিনের কথা মনে করে নিজে নিজেই
শিউরে উঠি। সেই ঘটনার পর আমি আর সেই
হোষ্টেলে থাকতে পানিরি । আমি
হোষ্টেল চেঞ্জ করে ডাবলিনের এক
বাঙ্গালীর বাড়িতে পেয়িং গেস্ট
হিসাবে উঠেছি । পরে খোঁজ নিয়ে
জানতে পেরেছি যে ঐ ফ্ল্যাট নং 06A
তে এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে , আমিই
প্রথম না।ঐটা একটা হন্টিং ফ্ল্যাট। আমি
আসার পর ও একে একে সবাই কিছু না কিছু
অঘটনের শিকার হয়েছে । হয়ত কোন দিনো
এর কূলকিনারা করতে পারব না কিন্তু কিছু
একটা রহস্য আছে যা অজানাই রয়ে গেল।
প্রকাশক:Pishach (পিশাচ) A Ghost Story
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন