শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০১৭

"ব্ৰহ্মডাঙার মাঠ" --ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়

যে সময়কার কথা বলছি তখন আমার বয়স চোদ্দ-পনেরোর বেশি নয়। মাকড়দার কাছেই আছে ঝাঁপড়দা। নামটা শুনলেই তখন হাসি পেত। তা সেই ঝাঁপড়দাতে আমাদের এক বন্ধু ছিল, তার নাম ক্যাবা। ক্যাবলাকান্ত থেকে ক্যাবা কিনা জানি না, ওই নামেই তাকে ডাকত সবাই । তা সেই বন্ধুটি বেঙড়পাড়ায় মুড়িউলি মাসির বাড়িতে আসত বলেই তার সঙ্গে আমার এবং আমার বন্ধুদের পরিচয়।
সে যাই হোক, একদিন ক্যাবা আমাদের ধরে বসল দু-একদিনের জন্য ওদের গ্রামে যেতে হবে। ওর এই আমন্ত্রণে আমরা কেউ না করলাম না। গোরা, আমি আর পল্টন তিনজনেই লাফিয়ে উঠলাম। যেহেতু মুড়িউলি মাসির বোনপো, তাই বাড়িতেও কেউ এই যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করল না। মুড়িউলি মাসির বাড়ি নার্নায়। ক্যাবাদের দক্ষিণ ঝাঁপড়দায়। আমাদের হাওড়া শহর থেকে জায়গাটার দূরত্বও বেশি নয়।
একদিন সকালে ক্যাবার সঙ্গেই আমরা চললাম ওদের দেশে। তখন হাওড়া ময়দান থেকে মার্টিন কোম্পানির ট্রেন চালু ছিল। সেই ট্রেনে চেপে আমরা ঘণ্টা দেড়েকের জার্নির পর ডোমজুড়ে এসে নামলাম।
ডোমজুড় তখন এত উন্নত ছিল না। চারদিকে মাটির অথবা ছিটেবেড়ার ঘর এবং বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। এইখান থেকে দক্ষিণ ঝাঁপড়দা হয়ে একটি বনপথ সোজা চলে গেছে নানার দিকে। নার্নার পঞ্চানন্দ হলেন অত্যন্ত জাগ্রত।
যাই হোক, সেই পথ ধরে একসময় শ্মশান পার হয়ে একটি গ্রামে এসে পৌঁছলাম আমরা। সেইখানে অনেক সুপ্রাচীন বট ও অশ্বত্থের সমারোহ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। তারই মাঝে বহুদিনের পুরনো একটি ভগ্নদশাপ্রাপ্ত বাড়িতে এসে ঢুকলাম আমরা।
ক্যাবা বলল, “এই আমাদের বাড়ি।” বাড়ির চেহারা দেখে বুক শুকিয়ে গেল। এ তো ভূতের বাড়ি। এই বাড়িতে কোনও মানুষ বাস করে? বাড়ির ইটগুলো সব নোনা লেগে ঝরে পড়ছে। কোথাও জোরে একটু শব্দ হলেও বোধ হয় ভেঙে পড়বে বাড়িটা। এই বাড়ির দোতলার একটি ঘরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হল।
সব দেখেশুনে গোরা বলল, “খুব জোর একটা রাত, তার বেশি নয়। কাল সকাল হলেই পালাব আমি।”
পল্টন বলল, “এ নির্ঘাত ভূতুড়ে বাড়ি। আজ রাতে ভূত এসে যদি আমাদের গলা টিপে না মারে তো কী বলেছি।”
আমি বললাম, “তার চেয়েও বেশি ভয় হচ্ছে আমার সাপ অথবা বিছের।” যে ঘরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল সেই ঘরে সাবেক কালের একটা পুরনো পালিশ ওঠা ভাঙা খাট ছিল। তাতে ছিল দুর্গন্ধযুক্ত তেলচিটে বালিশ আর চটের ওপর ছেড়া কাঁথা বিছানো গদি। এই বিছানায় শুতে হবে ভেবেও গা যেন ঘুলিয়ে উঠল।
একটু পরে ক্যাবা আমাদের নীচে নিয়ে গিয়ে ওর বাবা-মা'র সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। ওঁরা সবাই খুব খুশি হলেন আমাদের দেখে। ক্যাবার মা বললেন, “গরিবের বাড়িতে কেউ তো আসে না বাবা, তোমরা এসেছ বলে খুব আনন্দ হচ্ছে আমার। আমাদের ঘরদোর ভাল নয়, বিছানাপত্তর ভাল নেই। খুব কষ্ট হবে তোমাদের।”
ক্যাবার মায়ের আন্তরিকতাপূর্ণ কথা শুনে মন ভরে গেল আমাদের। সত্যিই স্নেহময়ী জননী তিনি। বললাম, “তাতে কী ? ও আমরা ঠিক মানিয়ে নেব।”
ক্যাবার মা বললেন, “যাও, কুয়োতলায় গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে এসো। আমি তোমাদের জলখাবারের ব্যবস্থা করি।”
আমরা ক্যাবার সঙ্গে কুয়োতলায় গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে নিলাম। ও দড়ি-বালতি নিয়ে জল তুলে দিতে লাগল। আমরাও জল খরচ করতে লাগলাম। তারপর গামছায় মুখ-হাত মুছে ঘরে আসতেই ক্যাবার মা আমাদের প্রত্যেককে মেঝেয় আসন পেতে বসিয়ে গরম গরম লুচি, আলুভাজা, বোদে আর পানতুয়া খেতে দিলেন। খুব তৃপ্তির সঙ্গে আমরা খেয়ে নিলাম সেগুলো ।
খাওয়াদাওয়া হলে আমরা ক্যাবার সঙ্গে গ্রামের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। এখানে এত ঘন ও বড় বড় গাছ চারদিকে যে, মনে হল এর পত্রছায়া ভেদ করে সূর্যের আলো বোধ হয় কারও ঘরে কখনও ঢোকে না। দিনমানেও তাই অন্ধকার।
যাই হোক, এইভাবে আমরা সারা গ্রাম তোলপাড় করে একসময় স্টেশনের দিকে এগোলাম ।
এখানটা তবু জমজমাট। চাঁপাডাঙার দিকে যাওয়ার জন্য একটি ট্রেন তখন তার দেশলাই খোলের মতো শরীর নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। আমরা যাওয়ার পরই হুইসল দিয়ে নড়ে উঠল ট্রেনটা। আর তার একটু পরেই চারদিক থেকে রব উঠল, গেল-গেল-গেল।
কী ব্যাপার? না, স্টেশন থেকে বেরিয়ে দক্ষিণবাড়ির মাঠের দিকে যেতে গিয়ে একটা ছাগলকে চাপা দিয়ে উলটে গেছে ট্রেনটা।
আমনই ছোট-– ছোট— ছোট।
অনেক লোকের সঙ্গে আমরাও ছুটলাম। কতকগুলো লোক ট্রেনের মাথায় বসে ঠ্যাং ছড়িয়ে বিড়ি বাঁধতে বাঁধতে যাচ্ছিল, তাদেরই অনেকে ছিটকে ছুটকে পড়ায় লেগেছে খুব। বাকি যারা, তারা ট্রেনের কামরা থেকে সামান্য আঘাত পেয়ে বেরিয়ে এসে দড়ি বাঁশ ইত্যাদি নিয়ে চেষ্টা করছে আবার কামরাগুলোকে লাইনের ওপর তুলে বসানোর জন্য। একটা বোকা পাঠা এমনভাবে কাটা পড়েছে যে, তার ধড় একদিকে মুণ্ডু আর একদিকে হয়ে গেছে।
যাই হোক, প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় কাত হওয়া দু-তিনটে বগিকে ঠিকভাবে বসানো হল।
আবার নড়ে উঠল ট্রেন। আমরাও বিদায় নিলাম। দুপুরবেলা স্নানপর্ব শেষ হলে মধ্যাহ্নভোজন। কাসার থালায় মোটা চালের ভাত। বড় জামবাটিতে করে পেয়াজ দিয়ে মুসুর ডাল। এছাড়া শাকভাজা, আলুভাজা, ঢ্যাঁড়সভাজী। পোস্তর চচ্চড়ি, শোলমাছের ঝোল আর আমের চাটনি তো ছিলই সময়টা তখন গরমের দিন। বৈশাখ মাস।
আমরা বেশ পরিতৃপ্তির সঙ্গে খাওয়াদাওয়া সেরে সুপুরি এলাচ মুখে দিয়ে ওপরের ঘরে শুতে এলাম। এতক্ষণে কিন্তু পরিবেশটা আমরা মানিয়ে নিতে পেরেছি। খাটে না শুয়ে ঘরের মেঝেয় মাদুর পেতেই আমরা শুয়ে পড়েছি। শুয়ে শুয়ে কত গল্পই না হল আমাদের! বেশি গল্প করতে লাগলাম ট্রেন ওলটানোর ওই ব্যাপারটা নিয়ে। ভাগ্যে বগিগুলো সব কাত হয়েছিল, না হলে কেউ না কেউ মরতই।
পল্টন বলল, “রেল দুর্ঘটনায় মরলেই লোকগুলো সব ভূত হত।”
গোরা বলল, “তা কেন হবে ? ওরা হত কন্ধকাটা।”
আমি বললাম, “বা রে! কন্ধকাটা বুঝি ভূত নয়?”
ক্যাবা বলল, “যতক্ষণ না কেউ নিজে থেকে রেললাইনে মাথা দিয়ে গলা না কাটাবে ততক্ষণে সে কন্ধকাটা হবে না।
তবে অপঘাতে মরলে অন্য ভূত সে হবেই।”
আমাদের যখন এইরকম সব আলোচনা হচ্ছে তখন হঠাৎই নাদাপেটা কদমছাঁটা একটা ছেলে এসে ক্যাবাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে চুপিচুপি ফিসফিস করে কী যেন বলল।
শুনেই তো লাফিয়ে উঠল ক্যাবা। বলল, “দারুণ হবে রে! কোথায় করবি ? ব্রহ্মডাঙার মাঠে ? তবে আর দেরি কেন? জোগাড়যন্তর কর সব।”
ছেলেটা চলে যেতেই ক্যাবা এসে বলল, “আজ রাতে একটা জোর পিকনিক হবে আমাদের। খালধারে ব্রহ্মডাঙার মাঠে। তোরাও থাকবি।”
পল্টন বলল, “বলিস কী রে! তা মেনুটা কী শুনি?”
“গরম ভাত, পাঁঠার মাংস আর আমের চাটনি।”
গোরা বলল, “চাঁদা কত করে? পাঠার তো অনেক দাম।”
ক্যাবা বলল, “তেল-নুনটা ঘর থেকেই জোগাড় হয়ে যাবে। চালেরও অভাব হবে না। আমও আছে গাছের ডালে, দু-চারটে পেড়ে নিলেই হবে। কিনতে হবে শুধু গুড়, চিনিটা। মাংসটা তো ফাউ। অর্থাৎ কিনা তখনকার সেই কাটা পড়া পাঠাটাই হবে আজ রাতে আমাদের খোরাক। আমার বন্ধু ওই হেবোটা সবার নজর এড়িয়ে সরিয়ে নিয়ে এসেছে পাঁঠাটাকে। অমন নধর পাঠা সচরাচর পাওয়া যায় না। সত্যি, ভোজটা যা হবে না!”
ক্যাবার কথায় গোরা, পল্টন উৎসাহিত হলেও আমার মন কিন্তু সায় দিল না। বললাম, “দ্যাখ, খাওয়ার জন্য একটা পাঠাকে যদি কাটা হয় বা ঠাকুর দেবতার থানে বলি দেওয়া হয়, সে আলাদা কথা। কিন্তু রেলে কাটা পড়া বা অন্য কোনওভাবে অপঘাতে মরা কোনও প্রাণীর দেহ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ না করাই ভাল।”
ক্যাবা বলল, “দুর বোকা, কেটে খাওয়া আর রেলে কাটা পড়া একই ব্যাপার হল। কিছুই হবে না ওতে। চল তো !”
আমার গা ঘিনঘিন করলে কী হবে, গোরা আর পল্টনের দেখলাম উৎসাহ খুব। অগত্যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতেই হল ওদের সঙ্গে।
ব্ৰহ্মডাঙার মাঠে তখন হেবো ছাড়াও আরও দু-তিনজন জড়ো হয়েছে। সবাই মিলে একটা গাছের ডালে পাঠাটাকে ঝুলিয়ে তার ছাল-চামড়া ছাড়াতে লেগে গেছে।
এই করতে-করতেই বেলা কাবার। সন্ধেবেলা মাঠে গর্ত করে সেই গর্তের মুখে ইট বসিয়ে উনুন তৈরি করা হল। তারপর শুকনো ডালপাল জোগাড় করে তাই জ্বাল দিয়ে শুরু হল রান্নাবান্না। দেখতে দেখতে আমরা প্রায় দশ-বারোজন হয়ে গেলাম। আমের চাটনি, ভাত আগেই তৈরি হয়েছিল। গরম গরম মাংস রান্না হলেই শুরু হবে খাওয়াদাওয়া। কুমোরদের বাড়ি থেকে কিছু মাটির গেলাস চেয়ে আনা হয়েছিল। একটা বালতিতে করে নিয়ে আসা হয়েছিল এক বালতি জল। ক্যাবা একটা কলাগাছ থেকে কতকগুলো পাতা কেটে এনেছিল। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেল খেতে বসবার সময়।
গরম মাংসর হাঁড়ি উনুন থেকে যেই না নামানো আমনই শুনতে পেলাম, “ব্য-ব্যা-ব্যা।” চমকে উঠলাম সবাই, এত রাতে ব্ৰহ্মডাঙার মাঠে কাদের ছাগল ডাকে? যেমন-তেমন ডাক নয়, অস্তিমের ডাক বলির আগে পাঠারা যেভাবে ডাকে, ঠিক সেইরকম। আর তারপরই মনে হল, মাঠময় কী যেন ছুটে বেড়াচ্ছে।
একটু পরেই হঠাৎ একটা ঢিপ করে শব্দ। যেন ভারী কিছু একটা লাফিয়ে পড়ল গাছের ডাল থেকে। আমাদের সঙ্গে দুটো হ্যারিকেন ছিল। সে দুটোও নিভে গেল দপদপিয়ে। আর সেই অন্ধকারে আমরা দেখতে পেলাম কিম্ভূতকিমাকার একটা মূর্তি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রান্না হওয়া সেই মাংসর হাঁড়িটার দিকে।
আমরা তখন আর আমাদের মধ্যে নেই। বাবা রে মা রে করে যে যেদিকে পারলাম পালালাম। ক্যাবা, আমি, গোরা আর পল্টন এক ছুটে ওদের বাড়িতে।
ক্যাবার মা তো সব শুনে খুব বকলেন ক্যাবাকে। বললেন, “বলিহারি রুচি তোদের! অপঘাতে মরা কোনও প্রাণিদেহর মাংস কেউ খায় ? তার ওপরে ভর সন্ধেবেলা তোরা গেছিস ব্রহ্মডাঙার মাঠে। ওটা যে একটা দোষান্ত মাঠ তা বুঝি ভুলে গিয়েছিস ?”
আমরা সবাই মাথা হেঁট করে বকুনি হজম করলাম। যাই হোক, সে রাতে মাংস-ভাতের বদলে দুধ-ভাত খেয়েই শুতে গেলাম আমরা। পরদিন সকাল হতেই আমরা বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
পরে—অনেক পরে ক্যাবার মুখে শুনেছি, একটা মুণ্ডহীন ছাগলকে প্রায়দিনই সন্ধের পর রেললাইনের ধারে অথবা ব্ৰহ্মডাঙার আশেপাশে তার ছায়াশরীর নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সে কারও ক্ষতি করে না, ভয় দেখায় না, ডাকেও না। শুধু দেখা দেয় আর মিলিয়ে যায়। তবে আমরা কিন্তু আর কখনও ও-মুখো হইনি।
(সমাপ্ত)

পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থান এরিয়া ৫১

রহস্য হলো এমন কিছু যা সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। পৃথিবীতে রহস্যের শেষ নেই। আর এইসব রহস্য নিয়ে মানুষের কৌতুহলেরও শেষ নেই। আজও মানুষেরা অনেক রহস্যের কূলকিনারা খুজে পায় নি। অনেক কিছুর রহস্য আবিষ্কার করলেও অইসব জিনিসের ব্যাখ্যাও সঠিকভাবে দিতে পারে নি। যার কারনে আজও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র কিছু রহস্যের ব্যাখ্যা পাবার জন্য।
“এরিয়া ৫১” এমন ই একটি স্থান, যা সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারনা নেই। যা নিয়ে মানুষ এর কৌতুহলেরও শেষ নেই। “এরিয়া ৫১” বহুল আলোচিত মার্কিন বিমান ঘাঁটি। এটি নিয়ে ঠিক কবে থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। এরিয়া ৫১ এমন একটি স্থান যেখানকার ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাধারন মানুষের চলাচল নিষেধ। দুর্ভেদ্য বেষ্টনীতে ঘেরা ঘাঁটিতে আজ পর্যন্ত বেসামরিক কেউ প্রবেশের দাবি করেনি। মার্কিন বিমান বাহিনি ঠিক কোন কারনে এই বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে তারও কোনো সঠিক ব্যাখ্যা নেই।
ভিনগ্রহের প্রানী এলিয়েন নিয়ে মানুষ এর কৌতুহলের সীমা নেই। কিন্তু নানা ধরনের গুজব-গুঞ্জন তখনি ডালপালা মেলতে শুরু করে যখন শোনা গেলো মার্কিন গোপন বিমান ঘাঁটি “এরিয়া ৫১” নাকি ঘুরে গেছে এলিয়েন এর দল। ঘাঁটিটি থেকে অনেক উচ্চতায় নাকি অজ্ঞাত উরন্ত বস্তু “ইউএফও” এর দেখাও মিলেছে। এর পর থেকেই এ জায়গা আরো রহস্যময় হয়ে উঠে। কিন্তু এইসব কথাগুলো আদৌ সত্য কিনা তা নিয়েই সন্দেহের সীমা নেই। ধারনা করা হয় এখান থেকে এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।
সবচেয়ে রহস্যময় হলো এই জায়গাটুকু পৃথিবীর মানচিত্রে পাওয়া যায় নাহ এমনকি গুগল আর্থ এও নাই। আমেরিকার নেভাদা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাংশে লাস ভেগাস থেকে ১৩৩ কিলোমিটার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে গ্রুম হ্রদের দক্ষিনতীরে এরিয়া ৫১ এর অবস্থান। ২০১৩ সালে “সিআইএ” সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে এরিয়া ৫১ এর কথা স্বীকার করে। ঠিক কবে থেকে মার্কিন এ গোপন ঘাঁটি “এরিয়া ৫১” নামে মানুষের নিকট পরিচিতি লাভ করে তা জানা যায় নি। অতীতের বিভিন্ন পত্রিকা, নথিপত্র ঘাটাঘাটি করে জানা যায়, পরীক্ষামুলকভাবে বিভিন্ন উড়োজাহাজ,ভারী অস্ত্র-শস্ত্র তৈরির কাজে এ ঘাঁটি ব্যবহার করা হয়। ২০০৯ সালে এরিয়া ৫১ থেকে অবসরপ্রাপ্ত কিছু কর্মকর্তা মানুষের কৌতুহল নিবারনের জন্য বলেছিলেন, এখানে মানবজাতির জন্য ক্ষতিকারক কিছুই করা হচ্ছে নাহ। নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় নিজেদের প্রযুক্তি উন্নত করার জন্য গবেষণার কাজগুলো অতি গোপনীয়তার সঙ্গে করা হচ্ছে। এখানে নাকি চন্দ্র মডিউল,সামরিক বিমান ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু কথাগুলো আদৌ সত্য না মিথ্যা তা বোঝার উপায় নেই।
কিন্তু যে গোপনীয়তার সহিত পুরো পৃথিবী হতে এলাকাটি নিশ্চিহ্ন করা তার কারনেই রহস্যের অন্ত নেই। নীল আর্মস্ট্রং এর চন্দ্র অভিযানের যে ইতিহাস, তাও নাকি পুরোটাই সাজানো একটি নাটক। এ নাটকের মঞ্চ হিসেবে নাকি ব্যবহৃত হয়েছিলো এরিয়া ৫১ নামের রহস্যঘেরা এ ঘাঁটির। আসলে অনেক খবর বের হয় এই এরিয়া ৫১ নিয়ে কিছু মিথ্যা কিছু সত্য, কিন্তু কোনগুলো মিথ্যা আর কোনগুলো সত্য তা না জানার কারনেই আজও এইসব রহস্যের জালে বন্দি।

এরিয়া ৫১ নিয়ে নানা গল্প শোনা যায়, সেগুলো রুপকথা না আদৌ ঘটেছে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এরিয়া ৫১ নিয়ে সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম হয় মানুষের চাঁদে যাওয়া নিয়ে। নীল আর্মস্ট্রং এর চন্দ্র অভিযানের যে ইতিহাস সেটা নাকি পুরোটাই একটি সাজানো নাটক। যে নাটকের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো এরিয়া ৫১।
অ্যাপোলো রকেট ডিজাইন করা কোম্পানি রকেটডাইন এর একজন ইঞ্জিনিয়ার ও পর্যবেক্ষক বিল কেইসিং এর লেখা “উই নেভার ওয়েন্ট টু দি মুন” শিরোনামের বইটি ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। এ বইয়ে লেখক দাবি করেন, অ্যাপোলো মিশন ছিলো বড় একটা মিথ্যা। পুরোটাই আইওয়াশ। তিনি নানা বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে প্রমান করার চেষ্টা করেন যে বাস্তবে ওই অভিযানের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। শুধুমাত্র বিল কেইসিং ই নন, আরো অনেকেই এই কথা বলেছেন। ষাটের দশকের নাসায় কর্মরত মহাকাশচারী এবং ও অ্যাপোলো মিশনের সায়েন্টিফিক এডভাইজার ‘ব্রাইয়ান ওলেরি’ বলেন, “আমি শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে সত্যিই কি তাঁরা চাঁদে গিয়েছিলো”। সবচেয়ে বেশি মজার বিষয় হলো, খোদ আমেরিকার ২০ শতাংশ মানুষ নীল আর্মস্ট্রং এর চন্দ্র অভিযানের প্রচলিত গল্প বিশ্বাস করে না।
তাহলে এত দিন ধরে যা জেনে আসছিলাম, সেটার পুরোটাই কি একটি সাজানো গল্প? রহস্যের সমীকরণ খুঁজে পেতে চলুন ফিরে যাই চার দশক আগে, যখন আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মাঝে শীতল যুদ্ধ চলছিল। দুই দেশই তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছিল। 14543327_1578732342435444_1930088540_nযু্দ্ধজয়ে মরিয়া দুই পক্ষই। তৎকালীন এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো যে, যে দেশ আগে মহাকাশে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে তারাই জয়ী হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর পৃথিবী থেকে প্রথম স্যাটেলাইট ‘স্পুটনিক ‘ মহাকাশে পাঠায়। মহাকাশে সোভিয়েত ইউনিয়নের এমন সাফল্য দেখে মাথাচারা দিয়ে উঠে আমেরিকা। বিল কেইসিং এর মতে ওই সময়ের প্রযুক্তিতে চাঁদে যাওয়া এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসার সম্ভাবনা ০.০০১৭ শতাংশ। কিন্তু এই সোভিয়েত ইউনিয়নকে দমানোর জন্যই নাকি এই অ্যাপোলো মিশন।
কথা হলো গিয়ে, অ্যাপোলো মিশন যদি মিথ্যা হয় তাহলে আমেরিকা কিভাবে এত বড় মিথ্যাকে সত্যে রুপান্তরিত করে পৃথিবীতে প্রকাশ ঘটালো। বিল কেইসিং এর মতে, “অ্যাপোলো মিশনে মহাকাশযানগুলো মহাকাশে গিয়েছিলো। কিন্তু চাঁদে মানুষ পাঠানো হয় নাই। অ্যাপোলো-১১ মহাকাশযানটি ৮ দিন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরেছিল। এরপর মুলযানটি আলাদা হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। আর টিভিতে যেটা দেখানো হয়েছিলো তা ছিলো পূর্বে ধারন করা। অনেকেই বলেন এটি ছিলো খুব বড় বাজেটের একটি নাটক যা এরিয়া ৫১ নামের মার্কিন গোপন ঘাঁটিতে মঞ্চায়িত হয়। এইসব কথাগুলোর পক্ষে যুক্তিরও অভাব নেই। কিন্তু কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তার কোন সঠিক তথ্য এখনো কেউ জানেনা ।

আগের দুই পর্ব থেকে আমরা জেনেছি যে  এরিয়া ৫১ রহস্যের অন্তরালে থাকা একটি ঘাঁটি যা আমেরিকায় অবস্থিত। এখানে কি কাজ করা হয় এত গোপনীয়তা মান্য করে সেটার রহস্যই আজ পর্যন্ত কেউ জানে  না।  রহস্যের ডামাঢোল বাজানোর যেই কারন তা হলো মানুষ আদৌ চাঁদে গিয়েছে কিনা? আর না গিয়ে থাকলে সেটার মঞ্চায়ন এরিয়া ৫১ তেই হয়েছে কিনা? আসলে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রতেই এইসবের প্রমান পাওয়া যায় না। বিচার করতে হয় যুক্তি দিয়ে। আর যেহেতু একেকজনের যুক্তি একেকরকম, তাই রহস্য আজও বিদ্যমান।
১৯৭৭ সালের ২ জুন হলিউডে মুক্তি পায় ” কেপ্রিকন ১” নামের একটা ছবি। ৫০ লাখ মার্কিন ডলার বাজেটের মুভিটির দৃশ্য আর চাঁদ থেকে পাঠানো মহাকাশচারীদের ভিডিওর সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। প্রযোজক পল এন ল্যাজারুসের মতে, নাসা ৪০ বিলিয়ন বাজেটের প্রোগ্রাম অ্যাপোলো মিশনে যে ভিডিও দেখিয়েছে, সেটা তারা মাত্র ৪ বিলিয়ন বাজেট নিয়ে করে দেখিয়েছে তাও আবার একটা টিভি স্টুডিও তে। আবার বিল কেইসিং এর মতেও চন্দ্র অভিযান হয় নি, এটাকে নাটকের আকারে সাজানো হয়েছে। আসলে সন্দেহের মুল কারন অনেক কিছুই আছে। যেমন,নাসার সরবরাহ করা ফুটেজে দেখা যায় দুটি বস্তুর ছায়া পরস্পরকে ছেদ করেছে।অথচ তা আলোর উৎস হওয়ায় সমান্তরাল হওয়ার কথা। এমনই হাজারো রহস্য আজও লুকিয়ে আছে। প্রমান করার জন্য যুক্তি অনেক উঠানো যায়, কিন্তু বিশ্বাস করার দায়িত্ব তো আপনার।
এরিয়া ৫১ এর অস্তিত্বের কথা স্বীকারঃ গত বছর সিআইএ একটি নথি উন্মুক্ত করে যার মধ্যে এরিয়া ৫১ এর কথা স্বীকার করা হয়েছে। তবে সেখানে একটি কথা পরিষ্কার করা হয়েছে এবং তা হলো যে এরিয়া ৫১ এ  ভিনগ্রহের প্রানীরা যাতায়াত করতো নাহ। বরং “ইউ-২” নামের গুপ্তচর বিমানের একটি প্রকল্প পরিচালনায় ব্যবহৃত হতো জায়গাটি। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর নজরদারি করাই ছিলো যেটার মুল উদ্দেশ্য।
তথ্য অধিকার আইনের আওতায় সিআই এর কাছ থেকে  এসব তথ্য পেয়েছে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় নিরাপত্তা মহাফেজখানা। ২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট প্রকাশ করা ওই নথিতে বলা হয়, গোপন-গুপ্তচর বিমান এর পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য ১৯৫৫ সালে নেভাদার জনশূন্য মরুভুমিতে “এরিয়া ৫১” নামের বর্তমান এই জায়গাটি বেছে নেয়া হয়।

নথিতে বলা হয়, অতি উচ্চতায় তাদের এইসব গুপ্তচর বিমান ওড়ানোর ফলে একটি গুজব অতিদ্রুত ছড়িয়ে পরলো যে ভিনদেশি প্রানীরা নাকি আমেরিকা ঘুরে গেছে। আসলে হয়েছিল কি, তৎকালীন বানিজ্যিক বিমানগুলো সাধারনত ১০-২০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তো। বি-৪৭ মডেলের যুদ্ধবিমানগুলো উড়তো ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায়। কিন্তু সেখানে ‘ইউ-২’ বিমানগুলো উড়তে পারতো ৬০ হাজারফুট উপর দিয়ে, যার কারনে সাধারন মানুষের ধারনা করতে সময় লাগে নাই যে এটি সাধারন কোনো বিমান নয়, নিশ্চয়ই ভিনদেশ থেকে এসেছে। অতি গোপন এই প্রকল্পের কথা যাতে ফাঁস না হয় সেইকারনে তখন চুপ ছিলো সিআইএ। এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর হয়তো সামনেই বের হবে। যতই তারা এরিয়া ৫১ এর কথা স্বীকার করুক, সাধারণ মানুষ এর মনে আজও সন্দেহ জাগবে তাহলে এখন কি করা হচ্ছে এরিয়া ৫১ এ ? কেন আজও এত নিরাপত্তা দিয়ে ঘেরাও করা ওই এরিয়া ৫১? মনের মধ্যে প্রশ্ন উঠা সাধারন ব্যাপার, কিন্তু এইসব প্রশ্নের উত্তর যখন সারা পৃথিবীর মানুষের নিকটই অজানা থাকে তখনই তাকে সবচেয়ে রহস্যময় বলা যায়।
তথ্যসূত্র: বাংলা ইনিশিয়েটর

রহস্যে ঘেরা জুজু

জুজু কি ? প্রথমেই বলে রাখি, ‘জুজু’ শব্দটা বাংলা সাহিত্যে একটা বাগধারার মত ব্যবহৃত হয় । ইংরেজি bogus boo এর মতই বাংলায় জুজু শব্দটি কোনো একটা কাল্পনিক ভয়াবহ জিনিস বুঝাতে ব্যবহৃত হয় । ছোট বাচ্চাদের পানির কাছাকাছি/বিপজ্জনক কোনো জায়গায় যেতে সব মায়েরাই নিষেধ করেন । বাচ্চারা না শুনলে ইংল্যান্ডের মায়েরা তখন বলেন, ওখানে যেয়ো না, ওখানে বোগাস বু আছে । বোগাস শব্দের আভিধানিক অর্থই হচ্ছে মিথ্যা/ভুয়া । পানির কাছে ভৌতিক কিছু নেই আসলে । বাচ্চাটাকে নিরুতসাহিত করতেই ওর মা বোগাস বু নামক কাল্পনিক ভূতের ভয় দেখাচ্ছে।
বাংলা সাহিত্যেও জুজু সেই রকম কাল্পনিক ভূতের অর্থে ব্যবহৃত হয় । উদাহরন স্বরুপ জুজু শব্দের ব্যবহারকে আরো ভালো কর বোঝানোর জন্য কয়েকটি বাক্য তৈরি করে দেখাচ্ছি ।
১. ‘প্রতিবেশী দেশ নিয়ে পুরনো জুজুর গল্প শুনতে শুনতে বিরক্তি ধরে গেছে’ 
২. ‘ছোটবেলা থেকেই আপনার ভেতরে যদি জুজু ঢুকে যায় যে আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা,আমি ভাল ছাত্রনা—তাহলে সেই জুজু আপনি কাটাতে পারবেন না । জীবনে উন্নতি করার জন্য সবার আগে মন থেকে জুজু তাড়াতে হবে’
এখানে জুজু শব্দের ব্যাবহার ১নং বাক্যে মিথ্যা ও ২য় বাক্যে এ ভয় এর বিপরীত এ ব্যাবহার করা হয়েছে।  আশা করি বাংলায় জুজু শব্দের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে আপনাদের ।
বাংলায় এই  ‘সাহিত্যের জুজু’  বাদেও একটা  ‘আক্ষরিক জুজু’  রয়েছে ।  জুজু মূলত এটা একটা আঞ্চলিক শব্দ । সিলেট এলাকার মানুষ জুজু নামের এক বিশেষ প্রকৃতির রহস্যময় প্রানীর কথা বলে থাকেন । বাংলাদেশের অন্য এলাকায় এই ধরনের জুজুর কথা শোনা যায়না । মোটামুটি যা জানা যায় তা হল -জুজু লোমশ একটা জীব । এর চোখ লাল টকটকে । ছোট বাচ্চাদের দিকেই এর নজর বেশী । 
রেডিও ফুর্তির  ভূত এফ এম নামক প্রোগ্রামে সিলেট চা বাগানের এক লোক এসেছিলেন একবার । জুজুকে নিয়ে তিনি যা যা শুনেছেন তাই শেয়ার করেছিলেন । ভূত এফ এম এ বর্ননা করা গল্প থেকে জানতে যায় –
এক মহিলা তার বাচ্চা কে ঘুম পাড়িয়ে আরেক রূমে টিভি দেখতে চলে গেল । কাজের মেয়েটা বাচ্চার রূমে এসেই গলা ফাটিয়ে একটা চিত্কার দিল । মহিলা দৌড়ে রূমে এসে দেখলেন কাজের মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে , আর লোমশ একটা জীব বাচ্চাটাকে জানালা দিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে । বাচ্চাটা হাত পা ছোড়াছুড়ি করছিল । মহিলাকে দেখেই জীবটা বাচ্চাটাকে ফেলে লাফ দিয়ে চা বাগানের ভিতর হারিয়ে যায় । জুজু ব্যাপারে আরেকটা ঘটনায় জানা যায়,  এক বাচ্চা কোন কারণে খাবার খেতে চাইছিলনা । তার মা তাকে জোর করে খাওয়াতে চেষ্টা করছিলেন । এক পর্যায়ে মহিলা বললেন ,” তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও । না হলে জুজু আসবে ।” কাছেই একটা চা বাগান থেকে একটা শব্দ মহিলা শুনতে পেলেন , “জুজু আসবে ।” মহিলা এটাকে পাত্তা দিলেন না । মনের ভূল কথাটা উড়িয়ে দিলেন । খানিক পর বাচ্চাটা আবার বাহানা শুরু করলে মহিলা বিরক্ত হয়ে বললেন , “এই খাও বলছি । জুজু আসবে কিন্তু বলে দিলাম ।” এবার মহিলা আগের বারের মতই কিন্তু অনেক কাছে শব্দ শুনলেন যে ,” জুজু এসেছে !” মহিলা ভয় পেয়ে গেলেন । ব্যাপারটা তার স্বামীকে বলার জন্য বাচ্চাটাকে ডাইনিং রুমে বসিয়ে অন্য রুমে গেলেন । তিনি যখনই তার স্বামীকে শব্দের ব্যাপারটা বলছিলেন , হঠাত্ তারা দুজনই শেষ বারের মত শব্দটা শুনলেন । এইবার শব্দটা ছিল এরকম : “জুজু খাচ্ছে !” “জুজু খাচ্ছে !” তারা দৌড়ে ডাইনিং রুমে গেলেন । গিয়ে দেখলেন , কালো লোমশ একটা প্রাণী জানালা দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে । আর তাদের বাচ্চা ? বাচ্চাটাকে অর্ধেক খেয়ে ফেলা হয়েছে ! জুজু নিয়ে চা বাগানের এটাই সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনা । চা বাগানে প্রায়ই কাজ করার সময় ছোট ছোট বাচ্চা নিখোঁজ হয় । পরে তাদের মাথা কাটা লাশ পাওয়া যায় । কার কাজ কেউই জানে না।

বন্ধুরা আজ আমরা  জুজু সর্ম্পকে সম্ভাব্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানব-
আমরা আমাদের আশেপাশে যে কোনো প্রানীর  অনেক গুলো প্রজাতিকেই দেখতে পাই ।প্রতিটা প্রজাতি একে অপরের থেকে একটু আলাদা । বিজ্ঞানীরা প্রতিটা আলাদা প্রজাতির জন্য আলাদা আলাদা বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছেন । এইভাবে এদেরকে একে অপর থেকে সহজে আলাদা করা যায় । উদাহরন হিসবে আমরা প্যাচার কথা বলতে পারি ।বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির প্যাচা রয়েছে । এগুলো হল-হুতুম প্যাঁচা (Bubo bengalensis), ভূতুম প্যাঁচা (Ketupa zeylonensis), লক্ষ্মীপ্যাঁচা (Tyto alba), খুঁড়ুলে প্যাঁচা (Athene brama), কুপোখ (Ninox scutulata), নিমপোখ (Otus lepiji)। কোবরা সাপ আছে ১০ প্রজাতির। আর কুকুর,বিড়াল কিংবা কবুতরের প্রজাতি হিসাব করতে গেলে সেটি কয়েক শততে পৌছাবে ।  
তবে এইখানে ‘প্রজাতি’র সংজ্ঞা একটু পরিষ্কার হয়ে নেওয়া ভাল । প্রজাতি হচ্ছে জীব জগতের শ্রেনীবিন্যাসের সেই সর্বনিম্ন শ্রেনী ,যেখানে জীবেরা একে অপরের সাথে যৌন মিলন করে একই প্রজাতির অপর একটি fertile (সন্তান জন্ম দিতে পারবে এমন) সন্তান জন্ম দিতে পারে । ২ টা পাতি কাক একে অপরের সাথে মিলনের মাধ্যমে নতুন একটা পাতি কাক জন্ম দিতে পারবে, কিন্তু দাড় কাকের সাথে পাতি কাকের মিলনে কোন বাচ্চা হবেনা ,কারন পাতি কাক আর দাড় কাকের প্রজাতি আলাদা । তবে কখনো কখনো ২ টা আলাদা প্রজাতির মিলনে সন্তান হতে পারে, তবে সেই সন্তান fertile হয়না । সেই নতুন বাচ্চা থেকে আর কোনো নতুন বাচ্চা হয়না । যেমন-ঘোড়া আর গাধার মিলনে খচ্চর জন্ম নেয় । রুই মাছ আর কাতল মাছের মিলনে জন্মায় কালিবাউশ মাছ । খচ্চর বা কালিবাউশ, এদের কারোরই সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারন এরা আলাদা প্রজাতির বাবা-মা থেকে এসেছে ।
আমাদের আশেপাশের প্রতিটি প্রানীরই একাধিক প্রজাতি রয়েছে ।কিন্তু মানুষের প্রজাতি কয়টা ? কখনো চিন্তা করেছেন বিষয়টা ?  ঠিক ধরেছেন, মানুষ এর একটাই প্রজাতি আছে পৃথিবীতে আর সেটাই হলাম আমরা। Homo sapiens । বিষয়টা অস্বাভাবিক মনে হয়না ? মানুষের কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অন্যান্য প্রজাতি থাকার কথা না পৃথিবীতে ? বিজ্ঞানীরা বলছেন,অতীতে হোমো স্যাপিয়েন্সের মতই মানুষের আরো কয়েকটা প্রজাতি পৃথিবীতে ছিল । ২ মিলিয়ন বছর আগে Homo ergester ছিল পৃথিবীতে । ১ মিলিয়ন বছর আগেও Homo erectus ছিল , Homo antecessor নামে আরেকটা প্রজাতিও ছিল সেই সময়ে । Homo sapiens এসেছে মোটামুটি ৩ লাখ বছর আগে । ওই সময়ে পৃথিবীতে একই সময়ে জাভা মানব, পিকিং মানব, নিয়ানডারথাল মানবরাও ঘুরে বেড়াত (Homo rhodesiensis, Homo erectus , Homo neanderthalensis)। ধারনা করা হয়  হোমো সাপিয়েন্স এর সাথে যুদ্ধ করে বাকি প্রজাতিগুলো পরাজিত হয়েছে । হোমো স্যাপিয়েন্স তাদেরকে পুরোপুরিই মেরে ফেলেছে । মানুষের ওই প্রজাতিগূলোর কোনো এক পিসও এখন আর পৃথিবীতে বেঁচে নেই । তাদের এক জনকেও আমরা খুজে বের করতে পারিনি । তবে বিশ্বের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় মাঝে মাঝে মানুষের আকৃতির কিছু প্রানী দেখা যায় । এরা প্রায় মানুষের মতই আচরন করে । এমনকি মানুষের গলায় কথাও বলতে পারে মাঝে মাঝে । ধারনা করা হয় এরা মানুষের পরাজিত প্রজাতির অবশিষ্ট প্রানীরা । নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে এরা দুর্গম এলাকায় থাকে। মাঝে মাঝে এক্সিডেন্টালি মানুষের সামনে পড়ে যায় ।

হিমালয়ের তুষারমানব ইয়েতি কে সন্দেহ করা হয় সম্ভাব্য হোমো ইরেকটাস এর বেঁচে যাওয়া বংশধর হিসেবে । খেয়াল রাখবেন, হিমালয় আর সিলেটের পাহাড় কিন্তু একই পাহাড়শ্রেনীর অংশ । আমাদের জুজুর গল্পে যে জিনিসটা চোখে পড়ার মত সেটা হল জুজু মানুষের গলায় কথা বলতে পারে এবং জুজু ২ পায়ে মানুষের মত চলতে পারে । হতেও পারে এরা কোনো Homo প্রজাতির বংশধর । সেক্ষত্রে প্রশ্ন আসে , কেন তারা শুধু বাচ্চাদের এটাক করে ?  বড় মানুষদের এতাক করে না কেন ?  সম্ভবত বড় মানুষদের তারা ভয় পায় । শক্তিতে বা বুদ্ধিতে তারা এডাল্ট মানুষদের সাথে পারবে না বলেই তারা মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকে । তবে শিশুদের কাছ থেকে বিপদের ভয় নেই বলেই হয়তো জুজুরা শিশু ধরে খেতে চায় । এটা জাস্ট একটা হাইপোথিসিস বা সম্ভাব্য বিশ্লেষন । বিস্তারিত অনুসন্ধান ছাড়া কিছু বলা যাবেনা । এমনও হতে পারে চা বাগানের কোনো মা তার পিতৃ পরিচয় বিহীন ছেলেকে নিজেই খুন করে/গ্রাম থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জুজুর গল্প তৈরি করেছিল, এবং কালক্রমে সেটাই কিংবদন্তীতে পরিনত হয়ে গেছে । কোনো নিরেট প্রমান ছাড়া কোন সিদ্ধান্তে আসা যাবেনা । এই বিষয়ে আরো তথ্য দরকার।